Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

Search Suggest

ইমাম তিরমিজি (রহঃ) এর সংখিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত :-

6 min read
★ ইমাম তিরমিযি (রহ.)এর আসল নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবু ঈসা, নিসবতি নাম তিরমিজি ও বুগি। আর বাবার নাম ছিল ঈসা ইবনে সুরাত। তাঁর উপাধি ছিল আল-ইমাম। তিনি বর্তমান উজবেকিস্তানের জিহুন নদীর বেলাভূমিতে অবস্থিত বিখ্যাত শহর তিরমিজের ‘বুগ’ নামক পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন ২০৯ হিজরি মোতাবেক ৮২৪ খ্রিস্টাব্দে।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.)-কে তাঁর জন্মস্থানের সঙ্গে সম্পর্ক করে তিরমিজি ও বুগি বলা হয়। ইমাম তিরমিজির পূর্বপুরুষরা ‘মুরাদ’ নামক শহরের বাসিন্দা ছিলেন। অতঃপর তাঁরা উজবেকিস্তানের তিরমিজ শহরে হিজরত করেন। তিরমিজ ছিল অসংখ্য মুহাদ্দিস ও বিজ্ঞ আলেমের জন্মস্থান। ইমাম তিরমিজি (রহ.) পারিবারিক পরিমণ্ডলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। খুব অল্প বয়সেই ইমাম তিরমিজি (রহ.) প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ সম্পন্ন করে ইলমে হাদিসের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দেশ সফর করেন।

★ ইলমে হাদিসে উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে ইমাম তিরমিজি (রহ.) খুব অল্প বয়সেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। তিনি হিজাজ, মিসর, বসরা, কুফা, শাম, খুরাসান, বাগদাদসহ বহু দেশ ও শহর ভ্রমণ করেন। তিনি তৎকালীন সব বিখ্যাত মুহাদ্দিসের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেন এবং ইলমে হাদিসে গভীর জ্ঞান লাভ করেন।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) ১০০০ এর ও বেশি মুহাদ্দিসের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেন। তাঁর ওস্তাদদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন হলেন_ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ সিজিস্তানি, আইমাদ বিন মুনা, মুহাম্মদ বিন মুছান্না, মুহাম্মদ বিন বাশ্শার, হান্নাদ বিন সুরি, কুতাইবা বিন সাঈদ, মাহমুদ বিন গায়লান, ইসহাক বিন মুসা আনসারী প্রমুখ মুহাদ্দিস।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) ইমাম বুখারি (রহ.)-এর ছাত্র ছিলেন, আবার তিনি ইমাম বুখারি (রহ.)-এর ওস্তাদও ছিলেন। কারণ ইমাম বুখারি (রহ.) ইমাম তিরমিজি (রহ.) থেকে কিছু হাদিস গ্রহণ করেছেন। ইমাম বুখারি (রহ.) বিভিন্ন সময়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.)-কে লক্ষ করে বলতেন, ‘তুমি আমার থেকে যতটুকু উপকৃত হয়েছ, তার থেকে বেশি উপকৃত হয়েছি আমি তোমার থেকে।’

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) তিরমিজি শরিফে দুটি হাদিসের ক্ষেত্রে লিখেছেন_ইমাম বুখারি (রহ.) আমার কাছ থেকে অত্র হাদিস গ্রহণ করেছেন। মুহাদ্দিসরা তাঁকে ইমাম বুখারির খলিফা বলে উল্লেখ করেছেন।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি : ইমাম তিরমিজি (রহ.) ছিলেন অসাধারণ এবং বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। এ বিষয়ে শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দেসে দেহলভি (রহ.) বুসতানুল মুহাদ্দিসিনে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

**  ইমাম তিরমিজি (রহ.) কোনো এক মুহাদ্দিসের কাছ থেকে হাদিসের দুটি পাণ্ডুলিপি ইজাজাতান লাভ করেছিলেন। অর্থাৎ ওই মুহাদ্দিস তাঁকে পাণ্ডুলিপি দুটিতে লিপিবদ্ধ হাদিসগুলো বর্ণনা করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর আকাঙ্ক্ষা ছিল পাণ্ডুলিপি দুুটির বিষয়ে সরাসরি ওস্তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। একবার এক সফরে ওই ওস্তাদের সঙ্গে ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর সাক্ষাৎ হলে তিনি নিজের বাসনার কথা তাঁকে জানান। ওস্তাদ বললেন ঠিক আছে, পাণ্ডুলিপি দুটি নিয়ে এসো। ইমাম তিরমিজি (রহ.) নিজ অবস্থানস্থলে গিয়ে তালাশ করে পাণ্ডুলিপি পেলেন না। তিনি বুঝতে পারলেন হাদিসের পাণ্ডুলিপি বাড়িতে রয়ে গেছে, তার পরিবর্তে তিনি সাদা কাগজ নিয়ে এসেছেন।

তিনি খুবই পেরেশান হলেন। অতঃপর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.) পাণ্ডুলিপিসদৃশ সাদা কাগজ নিয়ে ওস্তাদের সামনে বসে গেলেন। ওস্তাদ হাদিস পড়তে লাগলেন আর ইমাম তিরমিজি (রহ.) ওই কাগজের ওপর এমনভাবে চোখ ঘোরাতে লাগলেন, যেন তিনি ওস্তাদের পঠিত হাদিসের সঙ্গে পাণ্ডুলিপি মিলিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু একসময় ওস্তাদ বিষয়টি বুঝতে পারলেন। তিনি রেগে গিয়ে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে মজা করছ? ইমাম তিরমিজি (রহ.) অত্যন্ত আদবের সঙ্গে ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করে বললেন, হজরত, আপনার পঠিত সব হাদিসই আমার স্মৃতিতে গেঁথে গেছে। আমি মুখস্থ করে নিয়েছি। ওস্তাদ তখন তাঁকে হাদিসগুলো শোনাতে বললেন। তখন তিনি সব হাদিস নির্ভুলভাবে শুনিয়ে দিলেন। অতঃপর ওস্তাদ তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত আরো ৪০টি হাদিস শোনালেন। ইমাম তিরমিজি (রহ.) সেগুলোও হুবহু শুনিয়ে দিলেন। ওস্তাদ আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘তোমার মতো আর কাউকে আমি কোনো দিন দেখিনি।’


★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) ইলমে হাদিসের যে বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার আত্দস্থ করেছিলেন, তা দিয়ে তিনি অসংখ্য যোগ্য মুহাদ্দিস তৈরি করে রেখে গেছেন। একই সময়ে তাঁর হাদিসের দারসে হাজারো উচ্চতর জ্ঞানপিপাসু উলামায়ে কেরাম উপস্থিত হতেন। এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর কাছ থেকে ৯০ হাজার মুহাদ্দিস ইলমে হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ইমাম তিরমিজির ছাত্রদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন হলেন_মুহাম্মদ ইবনে সাহর, আহমাদ ইবনে ইউসুফ আন্ নাসাফি, দাউদ ইবনে নসর আল বায়জাবি ও মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ প্রমুখ। ইমাম তিরমিজি (রহ.) ইলমে হাদিসের শিক্ষাদানের পাশাপাশি বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। তাঁর রচনাবলির মধ্যে জামে তিরমিজি, ‘কিতাবুশ শামায়িল’ ও ‘কিতাবুল ইলাল’ আজও জ্ঞানপিপাসুদের পিপাসা নিবারণ করে চলেছে। ইবনে নাদিম ও হাফেজ ইবনে কাসার (রহ.) লিখেছেন যে ইমাম তিরমিজি (রহ.) তাফসির ও ইতিহাস বিষয়েও গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন ঈসা প্রণীত জামে তিরমিজি একটি অতুলনীয়, বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.) তাঁর স্মৃতিবদ্ধ লাখ লাখ হাদিসের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে সংকলন করেছেন। তিরমিজি শরিফে মোট ৪৬টি অধ্যায় ও দুই হাজার ১১৪ পরিচ্ছেদে তিন হাজার ৯৫৬টি হাদিস সনি্নবেশিত হয়েছে। এ জামে গ্রন্থটিতে হাদিসের পুনরুল্লেখ খুবই কম হয়েছে। ইমাম তিরমিজি (রহ.) অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে হাদিস নির্বাচন করেছেন। তিনি তিরমিজি শরিফ রচনার পর সমকালীন বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের সামনে উপস্থাপন করেন। তাঁদের কাছ থেকে গ্রন্থে সংকলিত হাদিসগুলোর বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি পাওয়ার পরই তিনি চূড়ান্তভাবে গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এ সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি (রহ.) নিজেই বলেছেন, আমি সহিহ সনদযুক্ত এ গ্রন্থখানা প্রণয়ন সম্পন্ন করে হিজাজের হাদিসবিদদের সামনে উপস্থাপন করলাম। তাঁরা এটা দেখে খুবই পছন্দ করলেন ও সন্তোষ প্রকাশ করলেন। অতঃপর আমি এটাকে খুরাসানের হাদিসবিদদের সামনে পেশ করলাম। তাঁরাও এটাকে খুবই পছন্দ করলেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করলেন। তিরমিজি শরিফ অত্যন্ত উঁচুমানের একটি হাদিস গ্রন্থ। শায়খুল ইসলাম হাফেজ ইমাম আবু ইসমাইল আবদুল্লাহ আনসারি (মৃ. ৪৮১ হি.) তিরমিজি শরিফ সম্পর্কে বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে তিরমিজি শরিফ বুখারি ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয় অপেক্ষা অধিক ব্যবহারোপযোগী। কেননা বুখারি ও মুসলিম এমন হাদিস গ্রন্থ যে শুধু বিশেষ পারদর্শী আলেম ছাড়া অন্য কেউ তা থেকে ফায়দা লাভ করতে পারে না। কিন্তু ইমাম আবু ঈসা তিরমিজির গ্রন্থ থেকে যে কেউ ফায়দা গ্রহণ করতে পারে।

★ জামে তিরমিজি হাদিস গ্রন্থখানা একাধারে জামে এবং সুনান। জামে বলা হয় ওইসব হাদিস গ্রন্থকে, যেগুলোর মধ্যে আটটি বিষয়ের হাদিস সনি্নবেশিত হয়েছে।

ওই আটটি বিষয় হলোঃ

1. আকাইদ,
2. ইতিহাস,
3. তাফসির,
4. শিষ্টাচার,
5. ফিতান বা উম্মতের মধ্যে উদ্ভূত বাতিল মতবাদ,
6. আহকাম বা শরীয় বিধান,
7. কিয়ামতের নিদর্শন ও
8. সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদাবিষয়ক।

★ এই তিরমিযি শরীফের কিছু বিশেষত্ব্য :-

1. যেগুলো ইলমে ফিকাহর ধারাবাহিকতায় বিন্যাস করা হয়েছে। ইমাম তিরমিজি (রহ.) স্বীয় হাদিস গ্রন্থখানা ফিকাহ ধারায় বিন্যাস করায় উম্মতের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা বহু মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

2. তিরমিজি শরিফের অনন্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরো একটি হলো, ইমাম তিরমিজি (রহ.) সব মুজতাহিদের মৌলিক দালিলিক হাদিসগুলোকে একত্রিত করেছেন।

3. ইমাম তিরমিজি (রহ.) স্বীয় কিতাবে ফকিহদের মতামত উল্লেখ করেছেন। যার ফলে এটি হাদিসের কিতাব হওয়া সত্ত্বেও ইলমে ফিকাহর ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে।

4. ইমাম তিরমিজি (রহ.) হাদিসের দালিলিক ভিত্তি বর্ণনা করেছেন এবং সনদ সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন।

5. ইমাম তিরমিজি (রহ.) প্রত্যেক পরিচ্ছদের শুরুতে এমন একটি, দুটি অথবা তিনটি হাদিস সংকলন করেছেন, যেগুলো অন্য কোনো ইমাম থেকে সংকলিত হয়নি। অতঃপর তিনি ‘ওয়া ফিল্ বাবি’ বলে বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য হাদিস সংকলন করেছেন। ইমাম তিরমিজির এই ‘ওয়া ফিল্ বাবি’-এর ওপর অনেকেই স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন।

6. দীর্ঘ হাদিসের মধ্য থেকে ইমাম তিরমিজি (রহ.) শুধু বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত অংশ তাঁর কিতাবে সংকলন করেছেন।

7. ইমাম তিরমিজি (রহ.) সন্দেহপূর্ণ বর্ণনার ক্ষেত্রে রাবির নাম, উপনাম, উপাধি ইত্যাদি বর্ণনা করেছেন, যাতে কোনো সন্দেহ অবশিষ্ট না থাকে।
জামে তিরমিজির বিন্যাস খুবই চমৎকার। এর থেকে হাদিস খুঁজে বের করা খুবই সহজ।

8. তিরমিজি শরিফে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর উম্মতে মুসলিমা আমল করে। কিতাবটিতে এমন কোনো হাদিস নেই, যার ওপর পৃথিবীর কোনো না কোনো মাজহাবের লোক আমল করে না।

9. সিহাহ সিত্তার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তিরমিজি শরিফের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এমনকি ওহাবী দেওবন্দি উলামায়ে কেরাম তিরমিজি শরিফকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিসের ক্লাসে পাঠদান করে থাকেন।

★ ইমাম তিরমিজি (রহ.)-এর সংকলিত হাদিস গ্রন্থে কিছু মওজু হাদিস আছে বলে অভিযোগ করা হয়।

আল্লামা ইবনে জাওজি (রহ.) বলেছেন, তিরমিজি শরিফের মধ্যে মোট ২৩টি মওজু হাদিস রয়েছে।

কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, তিরমিজি শরিফে কোনো মওজু হাদিস নেই। কারন ইবনে জাওজি ইমাম তিরমিযি (রহ) থেকে বড় কোন মুহাদ্দিস ছিলেন না আর ইমাম তিরমিযি এত বড় মুহাদ্দিস হয়েও কি ভাবে তিনি জাল হাদিস লিপিবদ্ধ করতে পারেন is it possible?যে তিনি না জেনে হাজার হাজার হাদিস থেকে বেছে কিছু জাল হাদিস ওনার সহিহ কিতাবে ওঠাবেন?

ইমাম তিরমিজি অত্যন্ত উচ্চমার্গের জাহেদ ও আবেদ ছিলেন।
তিনি সারা রাত ইবাদতে রত থাকতেন। তিনি মহান আল্লাহর দরবারে এত বেশি কাঁদতেন যে এ কারণেই শেষ বয়সে তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

★ মৃত্যুঃ ইলমে হাদিসের এ মহান ইমাম ১৩ রজব ২৭৯ হিজরি মোতাবেক ৮২৪ খ্রিস্টাব্দে তিরমিজে ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।



ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফিদাকা আবি ওয়া উম্মী ওয়া আহলি ওয়া দাময়ী ��

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...