Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

Search Suggest

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এবং স্ত্রীকে প্রহার করা সম্বন্ধে :-

7 min read

স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে আল্লাহ তায়ালা চান তারা যেন পরস্পর সুখে ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে। কিন্তু, মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণে তাদের সেই মধুর জীবনে অমানিশার কালো মেঘ উকি দিতে পারে। সেসব বিষয়ের সমাধান নিয়েই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আলোচনা করেছেন সুরা নিসার ৩৪ ও ৩৫ নং আয়াতে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا (34) وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِنْ أَهْلِهَا إِنْ يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا   (৩৫)

অর্থাৎ, তোমরা যে সমস্ত স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায় তাহলে তাদের সম্বন্ধে (বড় ধরণের) আর কোন সিদ্ধান্ত নিওনা। আল্লাহ তায়ালা সবার উপরে শ্রেষ্ঠ। আর যদি তাদের মধ্যে বিরোধের আশংকা কর তাহলে, তার পরিবার ও তোমার পরিবারের মধ্যকার একেকজন লোককে দিয়ে শালিস করতে প্রেরণ কর। তারা উভয়ের মাঝে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দিয়ে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও সবকিছু অবহিত। (সুরা নিসা: ৩৪-৩৫)

এই আয়াত দু’টোতে আল্লাহ তায়ালা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনরূপ সমস্যা ও মনোমালিন্যতার সৃষ্টি হলে তা সমাধানের বেশ কয়েকটা সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। ইসলাম কর্তৃক প্রদত্ত অধিকারের বাইরে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্য হলে সেগুলো অবলম্বন করে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আয়াতগুলোতে। নিম্নে ক্রমানুসারে সেগুলো উল্লেখ করা হল।

১। বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে সংশোধন করতে হবে।
২।নিজের ঘরের মধ্যেই তার বিছানা পৃথক করে দেবে।ঘরের বাইরে বিছানা করে দিলে ব্যাপারটা তৃতীয়পক্ষের কানে চলে যেতে পারে।ফলে,সহজে সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
৩।মৃদু প্রহার করবে।অমানুসিকভাবে প্রহার ইসলামে নিষিদ্ধ।
৪।ছেলে-মেয়ে উভয়ের পক্ষ থেকে একজন করে লোক নিয়ে সালিশ করতে হবে।
  ৫। উপরের একটা বিষয় অনুসরণের দ্বারাই যদি স্ত্রী সংশোধিত হয়ে যায় তাহলে,পরবর্তী দফা বাস্তবায়নের কোন প্রয়োজন নেই।সংশোধনের পর কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে এখানে নিষেধ করা হয়েছে।



ইসলামিক স্কলারগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: স্ত্রী যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে, তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সংশোধন করতে হবে। কারণ, সেও মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে। তাকে বুঝাতে পারলে সামনে তার এ ভুল আর হবে না। যদি তাতেও তার সংশোধন না হয় তাহলে, তার শয্যা পৃথক করে দিতে হবে। এখানে ঘর পৃথক করতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। কেননা, ঘর পৃথক করে দিলে সংশোধনের পরিবর্তে আরও ক্ষতির সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিজ ঘরের মধ্যে রেখেই পৃথক শয্যায় রাখতে হবে যেন সে, তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে। তখন ফিরে আসলে ভাল কথা। এখানে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত বিষয়টা তৃতীয় কারও কানে না দিয়ে নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করে নেয়ার চেয়ে উত্তম সমাধান পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। নিজেদের ভিতরের এ ব্যাপারটা তৃতীয়পক্ষ জেনে ফেললে তাতে সমস্যার সমাধান হওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার দ্বিতীয় জনের (যার বিরুদ্ধে তৃতীয় পক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে) মনোকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফলে, তাদের মধ্যকার বিশ্বাসে ফাটল ধরতে পারে।

তবে, এখানে আরেকটা কথা বলতে হয়-তা হল সর্বদা স্বামীর উদার দিল সম্পন্ন হওয়া উচিত। এমনও হতে পারে যে, স্ত্রী তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসতে চায়; কিন্তু, মনের মধ্যকার লজ্জা ভাঙ্গতে পারছে না। সেই পরিস্থিতি স্বামীকেই আচ করে নিতে হবে। তাহলে, আশা করা যায় দাম্পত্য জীবনে অমানিশার কালো মেঘ উকি দিতেও সাহস পাবে না ইনশাল্লাহ। সর্বোপরি একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা থাকা দরকার।

উপরোক্ত উপদেশ এবং শয্যা-ত্যাগেও যদি সে সংশোধন না হয় তাহলে, তাকে মৃদু প্রহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে, শর্ত করা হয়েছে যে, প্রহার যেন কঠোর না হয়।

তবে, বহু সংখ্যক হাদীসে প্রহারকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, ভালবাসা ও মহব্বতে যত সহজে কাজ হয়, মারধর করে ততসহজে সে কাজ করানো যায় না। একজন ছাত্রকে ভালবেসে যতটুকু শিক্ষা দেয়া যায়, প্রহার করে ততটুকু শিক্ষা দেয়া সম্ভব হয় না।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন:- তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম নয় যে, তার স্ত্রীদেরকে প্রহার করে।

আবু দাউদ শরীফসহ বেশ কিছু হাদীসের কিতাবে এসেছে- রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
لاَ تَضْرِبُوا إِمَاءَ اللَّهِ
অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে (স্ত্রীদেরকে) মারধোর করো না। (আবু দাউদ, নাসায়ী, দারেমী, মুসতাদরাকে হাকেম, বায়হাকী)

একবার রাসুল (সাঃ) এর বাড়ীতে প্রচুর সংখ্যক মহিলা (বায়হাকী শরীফে এসেছে ৭০জনের কথা) এসেছিলেন তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করতে যে, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমার স্বামী আমাকে প্রহার করে। পরের দিন সকাল বেলা রাসুল (সাঃ) ঘোষণা করে দিলেন, গতরাতে আমার পরিবারের কাছে অনেক মহিলা এসেছিলেন তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে মারধোর করার অভিযোগ নিয়ে। শুনে রাখ! আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তিরা ভাল নয়। (আমার মতে এর সর্বোত্তম অনুবাদ হল-ওরা মানুষ নয়!! অর্থাৎ, মানুষেরা এমন কাজ করতে পারে না। ) (আবু দাউদ, বায়হাকী, নাসায়ী, ইবনে হিব্বান,মুসনাদে শাফেয়ী, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক )

বুখারীসহ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে বলা হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ

অর্থাৎ, …….. তাদেরকে এমনভাবে প্রহার কর যেন তা “মুবাররিহ” না হয়।

“মুবাররিহ” এর ব্যাখ্যায় হযরত আ’তা (রাঃ) বলেছেন: আমি মুফাসসিরদের সরদার হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে এর অর্থ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছেন-এর অর্থ হচ্ছে মিসওয়াক কিংবা অনুরুপ কিছু দিয়ে প্রহার করা। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে বগভী,ফাতহুল ক্বাদীর, রুহুল মাআ’নী, তাবারী, শা’রাবী,খাযেন,বাহরুল মুহীত, তাফসীরে ইবনে হাতেম,দুররুল মানসুর)

উল্লেখ্য যে, এখানে মিসওয়াক বা অনুরুপ কিছু দিয়ে মৃদু প্রহার করার অনুমতি রয়েছে তবে, তা দিয়ে গুতা দেয়ার অনুমতি নেই।


আমরা সকলেই জানি শুরাইহ নামক একজন বিচারক ছিলেন হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফত আমলে। তিনি ছিলেন ন্যায় বিচারের একজন মুর্ত প্রতীক। আলী (রাঃ) খলীফা (রাষ্ট্রপ্রধান) থাকাকালে তিনি একবার আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধেও বিচারে রায় দিয়েছিলেন। তার দাম্পত্য জীবনের একটা ঘটনা খুবই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। উক্ত ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হল।


বিচারক শুরাইহ বনী তামীম গোত্রের এক মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন। বিবাহ পরবর্তী একান্ত সাক্ষাতের দিনের কথা প্রসংগে তিনি বলেছেন:


সেদিন আমি ওজু করলাম। তিনিও (স্ত্রী) ওজু করলেন। আমি নামাজ পড়লাম তিনিও আমার সাথে নামাজে দাড়ালেন। নামাজ শেষ করে আল্লাহ তায়ালার কাছে দুয়া করলাম তিনি যেন তার মধ্যে বরকত দান করেন এবং তার সকল অনিষ্ট থেকে আমাকে হেফাজত করেন।

তিনি হামদ ও সানা পড়ে কথাবার্তা শুরু করলেন। তাদের কথোপকথন নিম্নে উপস্থাপিত হল।

স্ত্রী: আমি আপনার নিকট একজন অপরিচিত মেয়ে। আমি জীবনে কখনো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির পথ ছাড়া অন্য কোন পথে চলি নাই। আর আপনিও আমার কাছে অপরিচিত। আমি আপনার স্বভাব সম্বন্ধে জানি না। আপনি কি কি পছন্দ করেন আর কি কি অপছন্দ করেন তা আমার জানা নেই। সুতরাং, সে বিষয়গুলো আমাকে বলে দিলে আমি আপনার পছন্দানুযায়ী কাজ করব এবং, অপছন্দনীয় কাজ বা জিনিস থেকে দূরে থাকব।

কাজী শুরাইহ: (গুনে গুনে বলে দিলেন) আমি অমুক অমুক জিনিস, কথা, কাজ ও খাদ্যকে পছন্দ করি। আর অমুক অমুক জিনিস, কথা, কাজ ও খাদ্যকে অপছন্দ করি।

স্ত্রী: আপনি আপনার শ্বশুর বাড়ীর আত্মীয়দের সম্বন্ধে বলুন। আপনি কি চান যে, তারা আপনার বাড়ীতে বেড়াতে আসুক?

কাজী শুরাইহ: আমি বিচারক মানুষ। আমি চাই না যে, তারা আমাকে বিরক্ত করুক। (বিরক্তির পর্যায়ে না গেলে সমস্যা নেই )

স্ত্রী: আপনার প্রতিবেশীর মধ্যকার কাদেরকে আপনার বাড়ীতে আসতে অনুমতি দিবেন?

কাজী শুরাইহ: অমুক অমুক আসতে পারে। (এক এক করে সব বর্ণনা করে দিলেন)

কাজী শুরাইহ বলেন: আমি ঐ দিন তার কাছে শ্রেষ্ঠ রাত অতিবাহিত করলাম। তার নিকট ৩ দিন থেকে কোর্টে (বিচারিক কাজে) গেলাম। এরপর থেকে এমন কোন দিন পাইনি যে দিনটা আমার কাছে আগের দিনের চেয়ে উত্তম নয়।

এভাবে একবছর অতিবাহিত হল। কাজী শুরাইহ দেখলেন তার বাড়ীতে একজন বৃদ্ধা মহিলা উপদেশ ও নসীহতমুলক কথাবার্তা বলছে।

কাজী শুরাইহ: (স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে) যায়নাব! এই বৃদ্ধা লোকটি কে?

স্ত্রী: আমার শ্রদ্ধেয় মা জননী।

কাজী শুরাইহ: (শাশুড়ীকে উদ্দেশ্য করে) আমাদের বাড়ীতে আপনাকে স্বাগতম।

শাশুড়ী: হে, আবু উমাইয়া! (কাজী শুরাইহীর উপাধী, অর্থ হল-উমাইয়ার পিতা। আরবদের বৈশিষ্ট্য হল- তারা বড় সন্তানের নাম ধরে পিতাকে ডাকে) আপনারা কেমন আছেন? কেমন যাচ্ছে আপনাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন?

কাজী শুরাইহ: আলহামদুলিল্লাহ, খুব সুন্দরভাবেই চলছে আমাদের জীবনযাপন।

শাশুড়ী: আপনার স্ত্রীকে কেমন পেয়েছেন?

কাজী শুরাইহ: আলহামদুলিল্লাহ, আমি তাকে অত্যন্ত উত্তম স্ত্রীরূপে পেয়েছি। তাকে পেয়েছি জীবনের উত্তম সংগীনী হিসেবে। আপনারা তাকে উত্তমরূপেই মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। তাকে উত্তমভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছেন।

শাশুড়ী: মহিলাদের দুই অবস্থায় কখনো মন খারাপ থাকে না। প্রথমটি হল-স্বামীর কাছ থেকে কিছু পেলে আর পুত্র সন্তান প্রসব করলে। যদি এমন কোন বিষয় দেখেন যা আপনাকে ক্রোধান্বিত করে তার ঔষধ হচ্ছে-প্রহার করা।……

কাজী শুরাইহ বলেন আমার বাড়ীতে আমার শাশুড়ী প্রতি বছর একবার করে আসতেন। আমাদের বাড়ীতে এসে তার কলিজার টুকরা সন্তানকে বিভিন্ন উপদেশ এবং নসীহত করে যেতেন।

তিনি বলেন: আমি এ স্ত্রীর সাথে গত বিশ বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করলাম অথচ, তার উপর আমি কখনো রাগ করিনি(রাগান্বিত হওয়ার মত কিছু পাইনি)। অন্য কথায় বলা যায়-আমাদের ভিতর বিগত বিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোন মনমালিন্যের ঘটনা সংঘটিত হয়নি। তবে, শুধুমাত্র একদিন আমি তার উপর রাগান্বিত হয়েছিলাম। তবে, সেদিনকার পরিস্থিতির জন্য আমি নিজেই দোষী ছিলাম। বরং, আমিই তার উপর জুলুম করেছিলাম। বাস্তবে তার কোন দোষ ছিল না।

এ ঘটনাটা আমাদের দাম্পত্য জীবনের জন্য একটা আদর্শ হতে পারে।
ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফিদাকা আবি ওয়া উম্মী ওয়া আহলি ওয়া দাময়ী ��

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...