Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

Search Suggest

Posts

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম কুস্তালানী (রহঃ) এর মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থের “নূর বিষয়ক” অধ্যায়ঃ (পর্ব ২)

14 min read

একসাথে সকল পর্ব :

http://sunni-encyclopedia.blogspot.com/2015/10/blog-post_15.html?m=1

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম কুস্তালানী (রহঃ) এর মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থের “নূর বিষয়ক” অধ্যায়ঃ (পর্ব ২)
অনুবাদ : কাজী সাইফুদ্দীন হোসাইন



মায়ের গর্ভে প্রিয়নবী (দ:)

আবরাহা’র শ্যেনদৃষ্টি থেকে আল্লাহতা’লা কর্তৃক রক্ষা পাবার পর এক রাতে আবদুল মোত্তালিব কা’বা ঘরের প্রাঙ্গনে ঘুমোবার সময় এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখেন। তিনি জেগে ওঠে ভয় পান এবং কুরাইশ গোত্রীয় গণকদের কাছে গিয়ে এর বিবরণ দেন। তারা তাঁকে বলে, “এ স্বপ্ন সত্য হলে আপনার ঔরসে এমন কেউ আসবেন যাঁর প্রতি আসমান ও জমিনের বাসিন্দারা বিশ্বাস স্থাপন করবেন এবং যিনি সুপ্রসিদ্ধি লাভ করবেন।” ওই সময় তিনি ফাতেমা নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করেন, যাঁর গর্ভে জন্ম নেন আবদুল্লাহ আল-যাবীহ (রা:), যাঁর ইতিহাসও সর্বজনবিদিত।

অনেক বছর পরে আবদুল্লাহ (রা:) নিজ জীবনরক্ষার সদকাহ-স্বরূপ এক’শটি উট কোরবানি করে তাঁর পিতাসহ যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন তাঁরা ফাতেমা নাম্নী এক ইহুদী গণকের সাক্ষাৎ পান। সে কুরাইশ গোত্রের সেরা সুদর্শন যুবক আবদুল্লাহ (রা:)-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনার জন্যে যতোগুলো উট কোরবানি করা হয়েছে, আমি ততোগুলো উট আপনাকে দেবো; তবে শর্ত হলো এই মুহূর্তে আপনাকে আমার সাথে সহবাস করতে হবে।” তার এ কথা বলার কারণ ছিল সে আবদুল্লাহ (রা:)-এর মুখমণ্ডলে নূরে মোহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দেখতে পেয়েছিল। আর সে এও আশা করেছিল সম্মানিত মহানবী (দ:)-এর মাতা সে-ই হতে পারবে। কিন্তু আবদুল্লাহ (রা:) জবাব দেন:

হারামের মোকাবেলায় কাম্য কেবল মৃত্যু
আর আমি এতে দেখি না কোনো হালাল বা বৈধত্ব
বরঞ্চ এক্ষণে তোমার দ্বারা যা আমা হতে যাচিত
সম্মানী মানুষের তা হতে নিজ সম্মান ও দ্বীন রাখা চাই সুরক্ষিত।

পরের দিন আবদুল মোত্তালিব নিজ পুত্রকে ওয়াহাব ইবনে আবদ মানাআফের সাথে দেখা করিয়ে দেন; ইনি ছিলেন বনূ যোহরা গোত্রপ্রধান, বংশ ও খানদানে তাদের অধিপতি। আবদুল মোত্তালিব পুত্র আবদুল্লাহ (রা:)-কে ওয়াহাবের কন্যা আমিনা (রা:)-এর সাথে বিয়ে দেন; ওই সময় আমিনা (রা:) ছিলেন কুরাইশ গোত্রে বংশ ও পারিবারিক দিক দিয়ে অন্যতম সেরা মহিলা। অতঃপর মিনা দিবসগুলোর মধ্যে কোনো এক সোমবার আবূ তালিবের গিরিপথে তাঁরা দাম্পত্যজীবনের শুভসূচনা করেন এবং মহানবী (দ:) তাঁর মায়ের গর্ভে আসেন।

তৎপরবর্তী দিবসে আবদুল্লাহ (রা:) ঘরের বাইরে বেরুলে ইতিপূর্বে তাঁর কাছে প্রস্তাবকারিনী সেই মহিলার দেখা পান। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, “গতকাল যে প্রস্তাব তুমি আমায় দিয়েছিলে, আজ কেন তা আমায় দিচ্ছ না?” সে প্রত্যুত্তরে বলে, “গতকাল যে জ্যোতি তুমি বহন করেছিলে, তা আজ তোমায় ত্যাগ করেছে। তাই আমার কাছে আজ আর তোমাকে প্রয়োজন নেই। আমি ওই নূর আমার (গর্ভ) মাঝে পেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু খোদাতা’লা তা অন্যত্র রাখার এরাদা করেছেন।”

মহানবী (দ:) তাঁর মা আমিনা (রা:)-এর গর্ভে আসার সূচনালগ্ন থেকেই বহু মো’জেযা তথা অলৌকিক বা অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটতে থাকে। সাহল ইবনে আবদিল্লাহ আত্ তুসতরী (রহ:) বলেন, “আল্লাহতা’লা যখন রজব মাসের কোনো এক শুক্রবার রাতে মহানবী (দ:)-কে তাঁর মায়ের গর্ভে পয়দা করেন, তখন তিনি বেহেশতের রক্ষক রিদওয়ানকে সর্বসেরা বেহেশতের দ্বার খুলে দিতে আদেশ করেন। কেউ একজন আসমান ও জমিনে ঘোষণা দেন যে অপ্রকাশ্য নূর যা দ্বারা হেদায়াতকারী পয়গম্বর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) গঠিত হবেন, তা এই নির্দিষ্ট রাতেই তাঁর মায়ের গর্ভে আসবেন, যেখানে তাঁর সৃষ্টিপ্রক্রিয়া পূর্ণতা পাবে। আরও ঘোষিত হয় যে তিনি সুসংবাদ দানকারী এবং সতর্ককারী হিসেবে (পৃথিবীতে) আবির্ভূত হবেন।”

কাআব আল-আহবার (রহ:) থেকে বর্ণিত আছে, মহানবী (দ:) তাঁর মায়ের গর্ভে আসার রাতে আসমানসমূহে এবং জমিনের প্রতিটি প্রান্তে ঘোষণা করা হয় যে রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে যে অপ্রকাশ্য নূর হতে সৃষ্ট, তা তাঁর মা আমিনা (রা:)-এর গর্ভে আসবেন।

উপরন্তু, ওই দিন পৃথিবীর বুকে যতো মূর্তি ছিল সবই মাথা নিচের দিকে এবং পা ওপরের দিকে উল্টো হয়ে গিয়েছিল। কুরাইশ গোত্র মারাত্মক খরাপীড়িত ও দুর্দশাগ্রস্ত ছিল; কিন্তু এই মহা আশীর্বাদধন্য ঘটনার বদৌলতে ধরণীতল আবারও শষ্যশ্যামল হয়ে ওঠে এবং বৃক্ষতরু ফলবতী হয়; আর আশীর্বাদ ও কল্যাণ (ওই গোত্রের) চারপাশ থেকে তাদের দিকে ধাবমান হয়। এ সব মঙ্গলময় লক্ষণের জন্যে সাইয়্যেদুনা মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম যে বছর তাঁর মায়ের গর্ভে আসেন, সেটিকে ‘বিজয় ও খুশির বছর’ বলা হয়।

ইবনে এসহাক বর্ণনা করেন যে আমিনা (রা:) সবসময়ই উল্লেখ করতেন মহানবী (দ:) তাঁর গর্ভে থাকাকালীন সময়ে ফেরেশতাবৃন্দ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসার কথা; আর তাঁকে বলা হতো, “এই জাতির অধিপতি আপনার গর্ভে অবস্থান করছেন।” তিনি এ কথাও উল্লেখ করেন, “আমি কখনোই (মহানবীকে) গর্ভে ধারণ অবস্থায় অনুভব করিনি যে আমি গর্ভবতী। আর আমি অন্যান্য গর্ভবতী নারীদের মতো কোনো অসুবিধা বা খিদেও অনুভব করিনি। আমি শুধু লক্ষ্য করেছি যে আমার ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একবার আমি যখন ঘুম আর জাগ্রতাবস্থার মাঝামাঝি ছিলাম, তখন কোনো এক ফেরেশতা এসে আমাকে বলেন,

‘আপনি কি মনুষ্যকুলের অধিপতিকে গর্ভে ধারণ করার অনুভূতি পাচ্ছেন?’ এ কথা বলে তিনি চলে যান। মহানবী (দ:)-এর বেলাদতের সময় ঘনিয়ে এলে তিনি আবার এসে আমাকে বলেন: ‘বলুন, আমি তাঁর (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের) প্রতি প্রত্যেক বিদ্বেষভাব পোষণকারীর ক্ষতি থেকে তাঁরই সুরক্ষার জন্যে মহান সত্তার মাঝে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং তাঁর নাম রাখি (সাইয়্যেদুনা) মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)’।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, “মহানবী (দ:)-এর দ্বারা তাঁরই মায়ের গর্ভে আসার অলৌকিক ঘটনা (মো’জেযা)-গুলোর একটি হচ্ছে এই যে, ওই রাতে কুরাইশ গোত্রের মালিকানাধীন সমস্ত পশুপাখি মুখ খুলে এ কথা বলেছিল, “কা’বাগৃহের প্রভুর দোহাই, রাসূলুল্লাহ (দ:) (তাঁর মায়ের) গর্ভে এসেছেন। তিনি-ই হলেন সারা জাহানের অধিপতি এবং এর অধিবাসীদের জ্যোতি (নূর)। এমন কোনো রাজার সিংহাসন নেই যা আজ রাতে ওলটপালট না হয়ে গিয়েছে।” পূর্বাঞ্চলের তাবৎ পশুপাখি পশ্চিমাঞ্চলের পশুপাখির কাছে এই খোশখবরী নিয়ে ছুটে গিয়েছে; আর অনুরূপভাবে সাগরজলের অধিবাসীরাও একে অপরকে একইভাবে সম্ভাষণ জানিয়েছে। তাঁর গর্ভে আসার মাসের প্রতিদিনই আসমানে এলান (ঘোষণা) দেয়া হয়েছে এবং জমিনেও এলান দেয়া হয়েছে এভাবে: ‘খুশি উদযাপন করো, (কেননা) আশীর্বাদধন্য ও সৌভাগ্যবান আবূল কাসেম আবির্ভূত হবার সময় সন্নিকটে।”

আরেকটি রেওয়ায়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে ওই রাতে প্রতিটি ঘরই আলোকিত করা হয়েছিল, আর ওই নূর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল; উপরন্তু, সমস্ত প্রাণিজগত-ও কথা বলেছিল।

আবূ যাকারিয়্যা এয়াহইয়া ইবনে আইস্ বলেন, “সাইয়্যেদুনা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁর মায়ের গর্ভে পুরো নয় মাস অবস্থান করেছিলেন, আর (ওই সময়) তাঁর মা কখনোই এমন কোনো ব্যথা বা অসুবিধা অনুভব করেননি যা একজন গর্ভধারিনী মা গর্ভকালীন সময়ে অনুভব করে থাকে। তিনি সবসময়ই বলতেন, ‘এই গর্ভের চেয়ে সহজ আর কোনো গর্ভ আমি প্রত্যক্ষ করিনি, এর চেয়ে আশীর্বাদধন্য গর্ভও আমি দেখিনি’।”

আমিনা (রা:)-এর গর্ভকালের দ্বিতীয় মাসে আবদুল্লাহ (রা:) মদীনা মোনাওয়ারায় তাঁরই বনূ নাজ্জার গোত্রীয় চাচাদের উপস্থিতিতে বেসাল (খোদার সাথে পরলোকে মিলন)-প্রাপ্ত হন। তাঁকে আল-আবওয়া’ নামের স্থানে সমাহিত করা হয়। এ সময় ফেরেশতাবৃন্দ বলেন, “হে আমাদের প্রভু ও মালিক! আপনার রাসূল (দ:) একজন এয়াতিম হয়ে গিয়েছেন।” জবাবে আল্লাহ পাক বলেন, “আমি-ই হলাম তাঁর রক্ষক ও সাহায্যকারী।”

মহানবী (দ:)-এর ধরাধামে আবির্ভাবে অলৌকিকত্ব

আমর ইবনে কুতায়বা তাঁর জ্ঞানী পিতা (কুতায়বা) থেকে শুনেছেন, তিনি বলেন: “আমিনা (রা:)-এর গর্ভের চূড়ান্ত সময় উপস্থিত হলে আল্লাহতা’লা ফেরেশতাদের আদেশ দেন, ‘আসমানের সব দরজা ও বেহেশতের সব দরজাও খুলে দাও।’ ওই দিন সূর্য তীব্র প্রভা দ্বারা সুসজ্জিত হয়, আর আল্লাহতা’লা মহানবী (দ:)-এর ওয়াস্তে ওই বছর পৃথিবীতে সকল নারীর গর্ভে পুত্র সন্তান মঞ্জুর করেন।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন যে আমিনা সবসময় বলতেন, “আমার গর্ভ যখন ছয় মাস, তখন এক ফেরেশতা আমায় স্বপ্নে দেখা দেন এবং বলেন: ‘ওহে আমিনা, আপনি বিশ্বজগতের সেরা জনকে গর্ভে ধারণ করেছেন। তাঁর বেলাদতের সময় আপনি তাঁর নাম রাখবেন (সাইয়্যেদুনা) মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) এবং সেই নাম (মোবারক) গোপন রাখবেন।’ প্রসব বেদনা অনুভূত হতে শুরু করলে কেউই জানেননি যে আমি ঘরে একা। আবদুল মোত্তালিব-ও জানতে পারেননি, কেননা তিনি ওই সময় কা’বা ঘর তওয়াফ করছিলেন। আমি একটি প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পাই যা আমাকে ভীতিগ্রস্ত করে। অতঃপর লক্ষ্য করতেই মনে হলো একটি সাদা পাখির ডানা আমার হৃদয়ে (মধুর) পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে, যার দরুন আমার সমস্ত শংকা উবে যায়; আর আমার অনুভূত সমস্ত (প্রসব) বেদনাও প্রশমিত হয়। আমার সামনে দৃশ্যমান হয় এক সাদা রংয়ের শরবত, যা আমি পান করি। এরপর এক তীব্র জ্যোতি আমার প্রতি নিক্ষেপিত হয় এবং আমি কয়েকজন মহিলা দ্বারা নিজেকে পরিবেষ্টিত দেখতে পাই। এঁরা তালগাছের সমান লম্বা ছিলেন, আর এঁদেরকে দেখতে লাগছিল আবদ মানাআফ গোত্রের নারীদের মতোই। আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে ভাবলাম, ‘এঁরা কীভাবে আমার সম্পর্কে জানলেন?’ ওই মহিলাবৃন্দ আমাকে বলেন, ‘আমরা হলাম ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া এবং ইমরানের কন্যা মরিয়ম।’ এদিকে আমার (শারীরিক) অবস্থা আরও তীব্র আকার ধারণ করলে ধুপধাপ আওয়াজও বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় আরও ভীতিকর হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় অামি হঠাৎ দেখতে পাই একখানি সাদা রেশমের ফালি আসমান ও জমিনের মাঝে বিছিয়ে দেয়া হয় এবং কেউ একজন বলেন, ‘তাঁকে লুকিয়ে রাখো যাতে মানুষেরা দেখতে না পায়।’ আমি আকাশে রূপার পানি ঢালার ‘জগ’ হাতে নিয়ে মানুষদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পাই। অতঃপর এক ঝাঁক পাখি এসে আমার ঘর ভরে যায়; এগুলোর ঠোঁট ছিল পান্নার, আর ডানা লালমণির। আল্লাহতা’লা এমতাবস্থায় আমার চোখের সামনে থেকে পর্দা উঠিয়ে নেন এবং আমি প্রত্যক্ষ করি সারা পৃথিবীকে, পূর্ব হতে পশ্চিমে, যেখানে তিনটি পতাকা ছিল উড্ডীন: একটি পূর্বদিকে, আরেকটি পশ্চিমদিকে এবং তৃতীয়টি কা’বা গৃহের ওপর। ঠিক সে সময়ই মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর বেলাদত (ধরাধামে শুভাগমন) হয়। তিনি ভূমিষ্ঠ হবার সাথে সাথেই সেজদায় পড়ে যান এবং আসমানের দিকে হাত তুলে বিনীতভাবে দোয়া করেন। অতঃপর আমি দেখতে পাই আসমানের দিক থেকে একটি সাদা মেঘ এসে তাঁকে ঢেকে ফেলে, যার দরুন তিনি আমার দৃষ্টির আড়ালে চলে যান। একটি কণ্ঠস্বরকে আমি বলতে শুনি, ‘তাঁকে দুনিয়ার সকল প্রান্তে নিয়ে যাও, পূর্ব ও পশ্চিমদিকে, সাগর-মহাসাগরে, যাতে সবাই তাঁকে তাঁর (মোবারক) নামে, বৈশিষ্ট্যে ও আকৃতিতে চিনতে পারে।’ এর পরপরই ওই সাদা মেঘমালা দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়।”


আল-খতীব আল-বাগদাদী (রহ:) বর্ণনা করেন আমিনা (রা:)-এর কথা, যিনি বলেন: “আমার গর্ভে (সাইয়্যেদুনা) মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেলাদত হওয়ার সময় আমি আধ্যাত্মিকতায় উদ্দীপ্ত আলোকোজ্জ্বল একখানি বড় মেঘ দেখতে পাই, যা’তে অনেকগুলো ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি, ডানা ঝাপটানোর এবং মানুষের কথাবার্তার আওয়াজ শুনি। ওই মেঘ তাঁকে ঢেকে ফেলে এবং তিনি আমার দৃষ্টির আড়ালে চলে যান। অতঃপর আমি একটি কণ্ঠস্বরকে বলতে শুনি, ‘(সাইয়্যেদুনা) মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)-কে সারা পৃথিবীতে ঘোরাও। তাঁকে জ্বিন, ইনসান, ফেরেশতা, বন্য পশুপাখির মতো সমস্ত আত্মাবিশিষ্ট সত্তার কাছে প্রদর্শন করো। তাঁকে দাও আদম (আ:)-এর (দৈহিক) আকৃতি; শীষ নবী (আ:)-এর জ্ঞান; নূহ (আ:)-এর সাহস; ইব্রাহীম (আ:)-এর (মতোই খোদার) নৈকট্য; ইসমাঈল (আ:)-এর জিহ্বা; এসহাক (আ:)-এর (অল্পে) তুষ্টি; সালেহ নবী (আ:)-এর বাগ্মিতা; লুত (আ:)-এর প্রজ্ঞা; এয়াকুব (আ:)-এর (কাছে প্রদত্ত) শুভসংবাদ; মূসা (আ:)-এর শক্তি; আইয়ুব নবী (আ:)-এর ধৈর্য; ইউনূস নবী (আ:)-এর তাবেদারী/আনুগত্য; ইউশা বিন নূন (আ:)-এর দ্বন্দ্বসংঘাত মোকাবেলা করার সামর্থ্য; দাউদ (আ:)-এর প্রতি প্রদত্ত সুরক্ষা; দানিয়েল নবী (আ:)-এর (খোদা)-প্রেম; ইলিয়াস নবী (আ:)-এর উচ্চমর্যাদা; এয়াহইয়া (আ:)-এর নিষ্কলঙ্ক অবস্থা; এবং ঈসা (আ:)-এর কৃচ্ছ্বব্রত। অতঃপর তাঁকে অবগাহন করাও আম্বিয়া (আ:)-মণ্ডলীর বৈশিষ্ট্যসমূহের মহাসমুদ্রে।’ এরপর ওই মেঘ সরে যায় এবং সাইয়্যেদুনা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) একটি সবুজ রেশমের টুকরো হাতে পেঁচিয়ে শক্তভাবে ধরেন; আর তা থেকে অনবরত পানি বেরোচ্ছিল। এমতাবস্থায় কেউ একজন বলেন, ‘উত্তম, উত্তম, মহানবী (দ:) সমগ্র জগতকে মুঠোর মধ্যে নিয়েছেন; জগতের সমস্ত সৃষ্টি-ই তাঁর মুঠোর অভ্যন্তরে রয়েছে, কেউই বাদ পড়েনি।’ এমতাবস্থায় আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখি তাঁকে জ্যোৎস্না রাতের পূর্ণচন্দ্রের মতোই (আলোকোজ্জ্বল) দেখাচ্ছিল। তাঁর কাছ থেকে ওই সময় সেরা মেশকের সুগন্ধ ছড়াচ্ছিল। আর এমনই সময় হঠাৎ সেখানে আবির্ভূত হন তিনজন। একজনের হাতে ছিল রুপার নির্মিত পানি ঢালার ‘জগ’; দ্বিতীয়জনের হাতে পান্নার তৈরি কাপড় কাচার বড় কাঠের পাত্র; আর তৃতীয়জনের হাতে ছিল এক টুকরো সাদা রংয়ের রেশমবস্ত্র, যা তিনি মোড়ানো অবস্থা থেকে খোলেন। এরপর তিনি একটি চোখ ধাঁধানো আংটি বের করে তা ওই ‘জগ’ হতে পানি দ্বারা সাতবার ধোন এবং সেই আংটির সাহায্যে মহানবী (দ:)-এর পিঠে (দুই কাঁধের মাঝে) একটি মোহর বা সীল এঁকে দেন। অতঃপর ওই রেশম দ্বারা তিনি তাঁকে মুড়িয়ে নিজ ডানার নিচে বহন করে এনে আমার কাছে ফেরত দেন।” [সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম]

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন, “মহানবী (দ:)-এর যখন বেলাদত হয়, তখন বেহেশতের রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতা রিদওয়ান তাঁর কানে কানে বলেন, ‘ওহে (সাইয়্যেদুনা) মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম), খুশি উদযাপন করুন। কেননা, অন্যান্য পয়গম্বরের যতো জ্ঞান আছে, তার সবই আপনাকে মঞ্জুর করা হয়েছে। অতএব, আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দের মধ্যে আপনি-ই সর্বাধিক জ্ঞানী এবং সাহসীও’।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন আমিনা (রা:)-এর কথা, যিনি বলেন: “আমার গর্ভে মহানবী (দ:)-এর বেলাদত (ধরাধামে শুভাগমন) হলে তাঁর সাথে আবির্ভূত হয় এক জ্যোতি, যা পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে অবস্থিত সমস্ত আকাশ আলোকিত করে। এরপর তিনি মাটিতে নেমে হাতের ওপর ভর দিয়ে এক মুঠো মাটি তুলে নেন এবং শক্তভাবে ধরেন; অতঃপর তিনি আসমানের দিকে তাঁর মস্তক মোবারক উত্তোলন করেন।”


আত্ তাবারানী (রহ:) বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:) যখন মাটিতে নামেন, তখন তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ ছিল এবং তাঁর তর্জনী আল্লাহতা’লার একত্বের সাক্ষ্য দিতে ওপরদিকে ওঠানো ছিল।

উসমান ইবনে আবি-ইল-আস্ বর্ণনা করেন যে তাঁর মাতা ফাতেমা বলেন, “সাইয়্যেদুনা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেলাদতের সময় আমি দেখতে পাই (আমিনার) ঘর আলোকিত হয়ে গিয়েছিল এবং তারকারাজি এতো কাছে চলে এসেছিল যে আমি মনে করেছিলাম সেগুলো বুঝি আমার ওপরই পড়ে যাবে।”

আল-এরবায ইবনে সারিয়্যা (রা:) বর্ণনা করেন মহানবী (দ:)-এর বাণী, যিনি এরশাদ ফরমান: “আমি-ই হলাম আল্লাহতা’লার বান্দা ও আম্বিয়া (আ:)-মণ্ডলীর সীলমোহর; ঠিক সে সময় হতে আমি তা-ই, যখন আদম (আ:)-এর কায়া মাটি ছিল। আমি এই বিষয়টি তোমাদের কাছে ব্যাখ্যা করবো: আমি-ই আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম (আ:)-এর দোয়ার উত্তর (ফসল); আর ঈসা (আ:)-এর প্রদত্ত শুভসংবাদ; আর আমার মায়ের দেখা স্বপ্নের বিষয়বস্তু। পয়গম্বরবৃন্দের মায়েরা অহরহ-ই (এ ধরনের) স্বপ্ন দেখে থাকেন।” মহানবী (দ:)-এর মা আমিনা (রা:) তাঁর বেলাদতের সময় এমন এক নূর (জ্যোতি) দেখতে পান যার আলোকোচ্ছ্বটায় সিরিয়ার প্রাসাদগুলোও আলোকিত হয়। হুযূর পূর নূর (দ:)-এর চাচা হযরত আব্বাস (রা:) তাঁর রচিত কবিতায় এই বিষয়টি-ই উল্লেখ করেন এভাবে –

”(হে নবী) আপনার বেলাদত হয়েছিল যবে
ভুবন ও দিগন্ত আলোকিত হয়েছিল আপনারই নূরের বৈভবে
সেই নূরের আলোয় ও ন্যায়ের পথেই চলেছি আমরা সবে।”

ইবনে সাআদ (রহ:) বর্ণনা করেন যে আমিনা (রা:)-এর গর্ভে যখন মহানবী (দ:)-এর বেলাদত হয়, তখন নবজাতকের শরীরে যে প্রসবোত্তর মল থাকে তা তাঁর মধ্যে ছিল না।

সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন ও জর্দান (শাম-দেশ)-এর প্রাসাদগুলো আলোকিত হওয়ার যে কথা (বর্ণনায়) এসেছে, সে সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যে মহানবী (দ:)-এর নবুওয়্যতের নূর হতে ওই সমস্ত রাজ্য আশীর্বাদধন্য হয়েছে; কেননা, ওগুলো তাঁরই নবুওয়্যতের এলাকাধীন। এ কথা বলা হয়েছে, “ওহে কুরাইশ গোত্র, রেসালাত এখন আর বনী ইসরাঈল বংশের আয়ত্তে নেই। আল্লাহর কসম, মহানবী (দ:) তোমাদেরকে এমন প্রভাব বিস্তারের দিকে পরিচালনা করবেন, যা পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হবে।”

মহানবী (দ:)-এর বেলাদত তথা ধরাধামে শুভাগমনকালীন অলৌকিক ঘটনাবলীর কিছু কিছু ইমাম এয়াকূব ইবনে সুফিয়ান নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের সূত্রে নিজ ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন যে পারস্যরাজ কিসরা (খসরু)-এর প্রাসাদ ওই সময় কেঁপে উঠেছিল এবং সেটির চৌদ্দটি ঝুল-বারান্দা ভেঙ্গে পড়েছিল; তাইবেরিয়াস হৃদের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল; পারস্যের আগুন নিভে গিয়েছিল (যা অসংখ্য বর্ণনামতে এক হাজার বছর যাবত অবিরাম জ্বলেছিল); আর আসমানে প্রহরী ও ধুমকেতুর সংখ্যা বৃদ্ধি দ্বারা নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে শয়তানের দলের আড়ি পাতার বদমাইশিকে প্রতিরোধ করা হয়েছিল।

হযরত ইবনে উমর (রা:) ও অন্যান্যদের বর্ণনানুযায়ী, হুযূর পূর নূর (দ:)-এর বেলাদত খতনা অবস্থায় হয় এবং তাঁর নাড়িও ইতোমধ্যে কাটা হয়ে গিয়েছিল। হযরত আনাস (রা:) উদ্ধৃত করেন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর হাদীস, যিনি এরশাদ ফরমান: “আমার মহান প্রভু কর্তৃক আমার প্রতি মঞ্জুরিকৃত উচ্চমর্যাদার একটি হলো, আমার বেলাদত (ধরাধামে শুভাগমন) খতনা অবস্থায় হয়েছে এবং কেউই আমার গোপন অঙ্গ দেখেনি।”

রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর বেলাদতের বছর সম্পর্কে (ঐতিহাসিকদের) বিভিন্ন মত রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠদের মত হচ্ছে তিনি ’হস্তীর বছর’ ধরণীতে আগমন করেন। সেটি ছিল আবরাহা বাদশাহ’র হস্তী বাহিনীর ঘটনার পঞ্চাশ দিন পরে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখের ভোরে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, “সাইয়্যেদুনা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেলাদত সোমবার হয়; রেসালাতের দায়িত্বও সোমবার তাঁর প্রতি ন্যস্ত হয়; মক্কা মোয়াযযমা থেকে মদীনা মোনাওয়ারায় হিজরত-ও করেন সোমবার; মদীনায় আগমনও করেন সোমবার; আর কালো পাথর বহনও করেন সোমবার। উপরন্তু, মক্কা বিজয় ও সূরা আল-মায়েদা অবতীর্ণ হবার উভয় দিন-ই ছিল সোমবার।”


আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-আস্ (রহ:) বর্ণনা করেন, “সিরিয়াবাসীদের এক পুরোহিত বসবাস করতেন মারর্ আল-যাহরান এলাকায়, যাঁর নাম ছিল ইয়াসা। তিনি সবসময় বলতেন, ‘মক্কায় এক নবজাতক শিশুর আবির্ভাবের সময় হয়ে এসেছে, যাঁর কাছে আরব জাতি সমর্পিত হবে; আর অনারব জাতিগোষ্ঠীও যাঁর কর্তৃত্বাধীন হবে। এটি-ই তাঁর (নবুওয়্যতের) জমানা।’ কোনো নবজাতকের জন্মের খবর পেলেই ওই পুরোহিত তার খোঁজখবর নিতেন। সাইয়্যেদুনা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেলাদত (ধরণীতে শুভাগমন) দিবসে আবদুল মোত্তালিব ঘর থেকে বেরিয়ে পুরোহিত ইয়াসা’র সাথে দেখা করতে যান। তিনিও ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁকে বলেন, ‘আপনাকে যে নবজাতকের ব্যাপারে বলেছিলাম, আপনি যেন তাঁর আশীর্বাদধন্য পিতামহ হোন। আমি বলেছিলাম, তাঁর বেলাদত হবে সোমবার, নবুওয়্যত পাবেন সোমবার, বেসাল (পরলোকে খোদার সাথে মিলন)-প্রাপ্তিও হবে সোমবার।’ আবদুল মোত্তালিব জবাবে বলেন, ‘এই রাতে, ভোরে আমার (ঘরে) এক নবজাতক আবির্ভূত হয়েছেন।’ পুরোহিত জিজ্ঞেস করেন, ‘তাঁর নাম কী রেখেছেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘(সাইয়্যেদুনা) মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)।’ ইয়াসা বলেন, ‘এই নবজাতক আপনার আত্মীয়ের (বংশের) মধ্যে আবির্ভূত হবেন বলেই আমি আশা করেছিলাম। আমার কাছে এর তিনটি আলামত ছিল: তাঁর তারকা (রাশি) গতকাল উদিত হয়; তাঁর বেলাদত হয় আজ; এবং তাঁর নাম (সাইয়্যেদুনা) মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)’।” সৌর বছরের সেই দিনটি ছিল ২০শে এপ্রিল এবং বর্ণিত আছে যে তাঁর বেলাদত হয়েছিল রাতে।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) বর্ণনা করেন, “মহানবী (দ:)-এর বেলাদত যে রাতে হয়েছিল, ঠিক ওই সময় একজন ইহুদী বণিক মক্কা মোয়াযযমায় অবস্থান করছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘ওহে কুরাইশ গোত্র! আজ কি আপনাদের কোনো নবজাতকের আবির্ভাব হয়েছে?’ তাঁরা উত্তর দেন, ‘আমরা জানি না।’ তিনি তখন তাঁদেরকে বলেন, ‘আজ রাতে সর্বশেষ উম্মতের পয়গম্বরের বেলাদত হবে। তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে ঘোড়ার (ঘাড়ে) কেশের মতো কিছু কেশসম্বলিত একটি চিহ্ন থাকবে।’ কুরাইশ নেতৃবৃন্দ ওই ইহুদীকে সাথে নিয়ে আমিনা (রা:)-এর কাছে যান এবং তাঁর পুত্রকে দেখা যাবে কি না তা তাঁর কাছে জানতে চান। তিনি তাঁদের সামনে নিজ নবজাতক পুত্রকে নিয়ে আসেন এবং তাঁরা তাঁর পৃষ্ঠদেশ হতে কাপড় সরালে সেই চিহ্নটি দৃশ্যমান হয়। এতে ওই ইহুদী সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরলে তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার জন্যে আফসোস! আপনার আবার কী হলো?’ তিনি উত্তর দেন, ‘আল্লাহর কসম! বনী ইসরাঈল বংশ হতে নবুওয়্যত অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে’।”

আল-হাকীম (নিশাপুরী) বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:) মক্কা মোকাররমা’র মোহাম্মদ বিন ইউসূফের ঘরে আবির্ভূত হন। তাঁর দুধ-মায়ের নাম সোয়াইবিয়া, যিনি ছিলেন আবূ লাহাবের বাঁদি এবং যাঁকে হুযূর পাক (দ:)-এর বেলাদতের খোশ-খবরী নিয়ে আসার জন্যে তাঁর মনিব (আবূ লাহাব) মুক্ত করে দিয়েছিল। আবূ লাহাবের মৃত্যুর পরে তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘তুমি এখন কেমন আছো?’ সে জবাব দেয়, ‘আমি দোযখে (নরকে) আছি। তবে প্রতি সোমবার আমাকে রেহাই দেয়া হয়; সেদিন আমি আমার এই আঙ্গুলগুলো হতে পানি পান করতে পারি।’ এ কথা বলার সময় সে তার দুটো আঙ্গুলের ডগা দেখায়। সে আরও বলে, ‘এই মো’জেযা (অলৌকিকত্ব) এ কারণে যে, মহানবী (দ:)-এর বেলাদতের সুসংবাদ নিয়ে আসার জন্যে আমি আমার দাসী সোয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম।’

ইবনে আল-জাযেরী বলেন, “অবিশ্বাসী আবূ লাহাব, যাকে আল-কুরআনে ভর্ৎসনা (লা’নত) করা হয়েছে, তাকে যদি মহানবী (দ:)-এর বেলাদতের খুশি উদযাপনের কারণে পুরস্কৃত করা হয়, তাহলে হুযূর পূর নূর (দ:)-এর উম্মতের মধ্যে সেসব মুসলমানের কী শান হবে, যাঁরা তাঁর বেলাদতে খুশি উদযাপন করেন এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ সর্বাত্মক উদ্যোগ নেন? আমার জীবনের কসম, মহা করুণাশীল আল্লাহতা’লার তরফ থেকে তাঁদের পুরস্কার হলো আশীর্বাদধন্য বেহেশতে প্রবেশাধিকার, যেখানে (তাঁদের জন্যে) অপেক্ষারত মহান প্রভুর অশেষ রহমত, বরকত ও নেয়ামত।”






ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফিদাকা আবি ওয়া উম্মী ওয়া আহলি ওয়া দাময়ী ��

You may like these posts

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...