Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

Search Suggest

Posts

কুরআন ও হাদিস এর আলোকে জাহান্নামের ভয়াবহতার আলোচনাঃ

13 min read


জাহান্নামের অস্তিত্বঃ 

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের জন্য জান্নাত ও অমান্যকারীদের জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যা বর্তমানে বিদ্যমান এবং কখনই তা ধ্বংস হবে না। তিনি মানুষ ও জ্বিন জাতি সৃষ্টি করার পূর্বেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন।

জাহান্নামের বিদ্যমানতা সম্পর্কে কুরআন থেকে দলীলঃ 

❑ প্রথম দলীলঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা জাহান্নামকে ভয় কর যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য’ [সূরা আল-ইমরান: ১৩১]

❑ দ্বিতীয় দলীলঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল’ [সূরা নাবা: ২১-২২]

জাহান্নামের বিদ্যমানতা সম্পর্কে হাদীছ থেকে দলীলঃ

❑ প্রথম দলীলঃ হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (ছা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থানস্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থানস্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থানস্থল দেখানো হয়) আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি। [বুখারী- হা/১৩৭৯, মুসলিম- হা/২৮৬৬] 

❑ দ্বিতীয় দলীলঃ অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আমি আমর ইবনু আমির ইবনে লুহাই খুযআহ্‌কে তার বহির্গত নাড়িভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সা-য়্যিবাহ্ উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে। [বুখারী- হা/৩৫২১] 

❑ তৃতীয় দলীলঃ অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (ছা.)-এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমিতো জান্নাত দেখছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচারণ কর, অতঃপর সে তোমার হতে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না। [বুখারী- হা/১০৫২, মুসলিম, হা/৯০৭] 

❑ চতুর্থ দলীলঃ অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন জান্নাত সৃষ্টি করলেন, তখন জিবরাইল (আ.)-কে বললেন, যাও, জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা এবং উহার অধিবাসীদের জন্য যেই সমস্ত জিনিস আল্লাহ তা‘আলা তৈরী করে রেখেছেন, সবকিছু দেখে আসলেন, এবং বললেন, হে আল্লাহ! তোমার ইজ্জতের কসম! যে কেহ এই জান্নাতের অবস্থা সম্পর্কে শুনবে, সে অবশ্যই উহাতে প্রবেশ করবে। (অর্থাৎ, প্রবেশের আকাঙ্খা করবে)। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের চারপার্শে কষ্টসমূহ দ্বারা বেষ্টন করে দিলেন, অতঃপর পুনরায় জিবরাইল (আ.)-কে বললেন, হে জিবরাইল! আবার যাও এবং পুনরায় জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা দেখে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! এখন যা কিছু দেখলাম, উহার প্রবেশপথ যে কষ্টকর। আমার আশংকা হচ্ছে যে, কোন একজনই উহাতে প্রবেশ করবে না। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন জাহান্নামকে সৃষ্টি করলেন, তখন বললেন, হে জিবরাইল! যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি দেখে এসে বলবেন, হে আল্লাহ! তোমার ইজ্জতের কসম! যে কেহ এই জাহান্নামের ভয়ংকর অবস্থার কথা শুনবে, সে কখনও উহাতে প্রবেশ করবে না। (অর্থাৎ, এমন কাজ করবে, যাতে উহা হতে বেঁচে থাকতে পারে)। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের চারপার্শে প্রবৃত্তির আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা বেষ্টন করলেন এবং পুনরায় জিবরাইলকে বললেন, আবার যাও এবং দ্বিতীয়বার উহা দেখে আস। তিনি গেলেন এবং এবার দেখে এসে বললেন, হে আল্লাহ! তোমরা ইজ্জতের কসম করে বলছি, আমার আশংকা হচ্ছে, একজন লোকও উহাতে প্রবেশ ব্যতীত বাকী থাকবে না। [আবু দাউদ- হা/৪৭৪৬, তিরমিযী- হা/২৫৬০, নাসাঈ- হা/৩৭৬৩, মিশকাত- হা/৫৪৫২]


হাশরের দিনের ভয়াবহ অবস্থাঃ 

❑ হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, কাফিরদেরকে হাশরের মাঠে মুখের মাধ্যমে হাঁটিয়ে উপস্থিত করা হবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! মুখের ভরে কাফিরদেরকে কিভাবে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে? তিনি বললেন, দুনিয়াতে যে সত্তা দু’পায়ের উপর হাঁটান, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন মুখের ভরে হাঁটাতে পারবেন না? তখন কাতাদাহ (রা.) বললেন, আমাদের প্রতিপালকের ইয্‌যতের কসম! অবশ্যই পারবেন। [বুখারী- হা/৬৫২৩] 

❑ অন্য হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, মানুষকে হাশরের মাঠে উঠানো হবে শূন্য পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাৎনা বিহীন অবস্থায়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ছা.)! তখন তাহলে পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের দিকে তাকাবে। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, হে আয়েশা! এরকম ইচ্ছে করার চেয়ে তখনকার অবস্থা হবে অতীব সংকটময়। (কাজেই কি করে একে অপরের দিকে তাকাবে)। [বুখারী- হা/হা/৬৫২৭]

জাহান্নামের স্তরঃ 

❑ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের পাপ অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করার জন্য জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর এবং স্তরভেদে তাপের তারতম্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন- তিনি মুনাফিকদের স্তর উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে’ [সূরা নিসা: ১৪৫] 

❑ তিনি অন্যত্র বলেন, ‘প্রত্যেকে যা করে তদনুসারে তার স্থান রয়েছে।’ [সূরা আনআম: ১৩২]

❑ তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছে সেকি তার মত যে আল্লাহ্‌র ক্রোধ নিয়ে ফিরে এসেছে? আর তার আশ্রয়স্থল জাহান্নাম এবং তা কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল। তারা আল্লাহ্‌র নিকট বিভিন্ন মর্যাদার। আর তারা যা করে, আল্লাহ তার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন।’ [সূরা আলে-ইমরান: ১৬২-১৬৩] 

জাহান্নামের দরজা সমূহঃ 

এখানে দরজা বলতে স্তরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে যা একটি অপরটির উপর অবস্থিত এবং তা পর্যায়ক্রমে পূর্ণ হবে।
❑ জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি যা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে’ [সূরা হিজির: ৪৩-৪৪] 
যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের নিকটে নিয়ে আসা হবে তখন তার দরজা সমূহ খুলে দেয়া হবে, অতঃপর তারা চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সেখানে প্রবেশ করবে।

❑ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যখন তারা জাহান্নামের নিকটে উপস্থিত হবে তখন ইহার প্রবেশদ্বারগুলি খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকটে কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূল আসেনি যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত তেলাওয়াত করত এবং এই দিনের সাক্ষাত সম্বন্ধে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তখন তারা বলবে অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত কাফিরদের প্রতি শাস্তির কথা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে’ [সূরা যুমার: ৭১] 

❑ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে লক্ষ করে বলবেন, ‘জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।’ [সূরা যুমার: ৭২] 

জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তার দরজাসমূহ এমনভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে যা হতে বের হওয়ার কোন অবকাশ থাকবে না।

❑ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হতভাগ্য। তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে’ [সূরা বালাদ: ১৯-২০] 

❑ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও তা বার বার গননা করে, সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে, কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়, তুমি কি জান হুতামা কি? ইহা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে, নিশ্চয়ই ইহা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে’ [সূরা হুমাযাহ্: ১-৯] 




জাহান্নামের প্রহরীঃ

মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী নিযুক্ত করেছেন যারা আল্লাহর আদেশ পালনে সদা প্রস্তুত থাকে, কখনোই তা অমান্য করে না। 
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ 
❑ ‘হে মু’মিনগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ তাঁদেরকে যা আদেশ করেন তা পালনে। আর তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই পালন করে’ [সূরা আত-তাহরীম: ৬] 

❑ আর জাহান্নামের প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের সংখ্যা ১৯ জন। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘আমি তাদেরকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ। তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না। ইহা গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে। সাকার-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে উনিশজন প্রহরী’ [সূরা মুদ্দাছছির: ২৬-৩০]
আয়াতে উল্লেখিত সংখ্যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। কারণ, তারা ধারণা করে যে, এই অল্প সংখ্যক ফেরেশতার শক্তির সাথে বিপুল পরিমাণ জাহান্নামীদের বিজয়লাভ সম্ভব। কিন্তু তারা জানেনা যে, একজন ফেরেশতার শক্তি দুনিয়ার সকল মানুষের চেয়েও বেশী। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ-

❑ ‘আমি ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী নিযুক্ত করেছি, কাফিরদের পরীক্ষাস্বরূপই আমি তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি যাতে কিতাবীদের দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে, বিশ্বাসীদের বিশ্বাস বৃদ্ধি হয় এবং বিশ্বাসীরা ও কিতাবীগণ সন্দেহ পোষণ না করে’ [সূরা মুদ্দাছছির: ৩১] 


জাহান্নামের প্রশস্ততা ও গভীরতাঃ

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অবাধ্য বান্দাদের শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যার প্রশস্ততা বিশাল এবং গভীরতা অনেক যার প্রমাণ নিম্নরূপঃ
❑ প্রথম দলীলঃ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। জাহান্নামীদের সংখ্যার আধিক্য বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এর পরেও আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদেরকে বিশাল আকৃতির দেহ দান করবেন। যেমন- তাদের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান, এক কাঁধ থেকে অপর কাঁধের দুরুত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের পথ, চামড়া হবে তিন দিনের পথ পরিমান মোটা। এতো বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তা পূর্ণ হবে না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের পাঁ জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে বলবেন: ‘সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? জাহান্নাম বলবে, আরও কিছু আছে কি?’ [সূরা ক্বাফ: ৩০] 
এই উত্তর শুনে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ পাঁ জাহান্নামের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামে অনবরত (জ্বিন-মানুষ) কে নিক্ষেপ করা হবে। তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরো অধিক কিছু আছে কি? এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ পাঁ প্রবেশ করাবেন। তখন জাহান্নামের একাংশ অপর অংশের সাথে মিলে যাবে এবং বলবে, তোমার মর্যাদা ও অনুগ্রহের কসম! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। [বুখারী- হা/৬৬৬১, মুসলিম- হা/২৮৪৮, মিশকাত- হা/৫৪৫১]

❑ দ্বিতীয় দলীলঃ জাহান্নামের গভীরতা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর সাথে ছিলাম। যখন তিনি একটি শব্দ শুনলেন তখন বললেন, তোমরা কি জান এটা কি? তখন আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, এটি এক খন্ড পাথর যা জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে ৭০ বছর পূর্বে, এখন পর্যন্ত সে নিচের দিকে অবতরণ করছে জাহান্নামের তলা খুজে পাওয়া অবধি। অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) একদা একটি বড় পাথর খন্ডের দিকে ইশারা করে বলেন যে, যদি এই পাথরটি জাহান্নামের কিনারা দিয়ে তার ভিতরে নিক্ষেপ করা যায়, তবে ৭০ বছরেও সে তলা পাবেনা। [মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ-হা/৩৫২৮৪, ছহীহ আল-জামে’ আছ-ছাগীর- হা/৫২১৪] 

❑ তৃতীয় দলীলঃ জাহান্নাম এতো বিশাল যে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে টেনে আনতে বিপুল পরিমাণ ফেরেশতার প্রয়োজন হবে। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে, যার ৭০ টি লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা থাকবে, তাঁরা তা টেনে আনবে।*১৬* [মুসলিম- হা/২৮৪২, মিশকাত- হা/৫৪২২] 

❑ চতুর্থ দলীলঃ ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর দু’টি বিশাল সৃষ্টি চন্দ্র-সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, যার প্রমাণে বায়হাক্বীতে বর্ণিত হয়েছে: হাসান বাছরী (রহ.) বলেন, 
আবু হুরায়রাহ (রা.) আমাদেরকে রাসূল (ছা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে দুটি পনিরের আকৃতি বানিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন হাসান বাছরী জিজ্ঞেস করলেন, তাদের অপরাধ কি? জবাবে আবু হুরায়রাহ বললেন, আমি রাসূল (ছা.) হতে এ ব্যাপারে যা কিছু শুনেছি, তাই বর্ণনা করলাম, এই কথা শুনে হাসান বাছরী নীরব হয়ে গেলেন। [সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ- হা/১২৪, মিশকাত- হা/৫৪৪৮] 



জাহান্নামের জ্বালানীঃ 

❑ মহান আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে পাথর এবং পাপিষ্ঠ কাফিরদেরকে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা অমান্য করেনা তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে’ [সূরা আত-তাহরীম: ৬]

❑ অত্র আয়াতে মানুষ বলতে কাফির-মুশরিকদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। আর পাথর বলতে কোন প্রকারের পাথর যা আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে ব্যাবহার করবেন তা আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। তবে বলা হয়ে থাকে, ইহা ঐ সমস্ত মুর্তি, কাফির-মুশরিকরা যাদের ইবাদত করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সকলে উহাতে প্রবেশ করবে’ [সূরা আম্বিয়া: ৯৮] 

❑ ইবনে রজব (রহ.) বলেন, অধিকাংশ মুফাসসিরগণ পাথর বলতে গন্ধক পাথরকে বুঝিয়েছেন যা আগুনকে প্রজ্জ্বলিত করে এবং বলা হয়ে থাকে এই আগুনে পাঁচ প্রকার শাস্তি বিদ্যমান। যথাঃ-
(১) দ্রুত আগুন প্রজ্জ্বলিতকরণ। 
(২) অতি দুর্গন্ধময়। 
(৩) অতিরিক্ত ধোঁয়া নিসৃতকরণ 
(৪) কঠিনভাবে শরীরের সাথে আগুনের সংযুক্তকরণ। এবং 
(৫) তাপের প্রখরতা।

❑ মানুষ আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যে সকল ব্যক্তি বা বস্তুকে মা‘বুদ হিসাবে গ্রহণ করেছে, আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে মানুষ এবং পাথরের সাথে সে সকল মা‘বুদদেরকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলিতো জাহান্নামের ইন্ধন, তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে। যদি তারা ইলাহ হতো তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না, তাদের সকলেই তাতে (জাহান্নামে) স্থায়ী হবে’ [সূরা আম্বিয়া: ৯৮-৯৯]

জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা এবং ধোঁয়ার আধিক্যঃ

❑ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচন্ড উত্তপ্ত পানিতে, আর প্রচন্ড কালো ধোঁয়ার ছাঁয়ায়, যা শীতলও নয়, সুখকরও নয়’ [সূরা ওয়াকি‘আহ: ৪১-৪৪]

অত্র আয়াত সমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিনের প্রচন্ড তাপ থেকে মানুষকে ঠান্ডা করবেন তিনটি বস্তু দ্বারা, তা হল:- 
(১) পানি 
(২) বাতাস এবং 
(৩) ছাঁয়া, 
যার সামান্যটুকুও জাহান্নামীদেরকে দেয়া হবে না। 

❑ অতএব, জাহান্নামের বাতাস যা তার অধিবাসীদেরকে দেয়া হবে, তা প্রচন্ড গরম বাতাস। আর পানি যা পান করতে দেয়া হবে, তা প্রচন্ড গরম পানি। আর ছাঁয়া যা তাদেরকে আচ্ছাদন করে রাখবে, তা জাহান্নামের আগুন নিসৃত ধোঁয়ার ছাঁয়া। এগুলো জাহান্নামীদের কোন উপকারে আসবে না, বরং এগুলো তাদের অধিক শাস্তির কারণ হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘চল তিন শাখাবিশিষ্ট ছাঁয়ার দিকে, যে ছাঁয়া শীতল নহে এবং যা রক্ষা করে না অগ্নিশিখা হতে, উহা উৎক্ষেপ করবে বৃহৎ স্ফুলিংগ অট্টালিকাতুল্য, উহা পীতবর্ণ উষ্ট্রশ্রেণী সদৃশ’ [সূরা মুরসালাত: ৩০-৩৩]

অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের আগুন নিসৃত ধোঁয়ার তিনটি প্রকার উল্লেখ করেছেন, তা হল:- (১) ছাঁয়া সদৃশ ধোঁয়া যা শীতল করে না। 
(২) এই ধোঁয়া জ্বলন্ত অগ্নিশিখা থেকে রক্ষা করতে পারে না। 
(৩) এই ধোঁয়া মোটা কালো উষ্ট্রি সদৃশ।

❑ আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি তাকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ, তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিতাবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না, ইহা তো গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে’ [সূরা মুদ্দাছছির: ২৬-২৯]


❑ জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেন, দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো উনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সমপরিমাণ উত্তাপ রয়েছে। [বুখারী- হা/৩২৬৫,মিশকাত- হা/৫৪২১] 

❑ আর জাহান্নামের আগুনের তাপ কখনো প্রশমিত হবেনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, আমি তো তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করব’ [সূরা নাবা: ৩০] 
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যখনই উহা (জাহান্নামের আগুন) স্তিমিত হবে আমি তখনই তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব’ [সূরা বানী ইসরাঈল: ৯৭]
যার কারণে জাহান্নামীরা কখনো সামান্যটুকু বিশ্রামের অবকাশ পাবে না এবং তাদের থেকে শাস্তির কিছুই কমানো হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না’ [সূরা বাক্বারহা: ৮৬]

ইবনে উমার (রা.)-এর স্বপ্নে জাহান্নাম দর্শনঃ

❑ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর বেশ কয়েকজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর যুগে স্বপ্ন দেখতেন। অতঃপর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর কাছে তা বর্ণনা করতেন। আর রাসূলুল্লাহ (ছা.) এগুলোর ব্যাখ্যা দিতেন যা আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। আমি তখন অল্প বয়সের যুবক। আর বিয়ের পূর্বে মসজিদই ছিল আমার ঘর। আমি মনে মনে নিজেকে সম্বোধন করে বললাম, যদি তোমার মধ্যে কোন কল্যাণ থাকত তাহলে তুমি তাঁদের মত স্বপ্ন দেখতে। আমি এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বললাম, হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন যে, আমার মধ্যে কোন কল্যাণ আছে তাহলে আমাকে কোন একটি স্বপ্ন দেখান। আমি ঐ অবস্থায়ই (ঘুমিয়ে) থাকলাম। দেখলাম আমার কাছে দু’জন ফেরেশতা এসেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতেই লোহার একটি করে হাতুড়ি। তারা আমাকে নিয়ে (জাহান্নামের দিকে) এগোচ্ছে। আর আমি তাঁদের দু’জনের মাঝে থেকে আল্লাহর কাছে দু’আ করছি, হে আল্লাহ! আমি জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর আমাকে দেখানো হল যে, একজন ফেরেশতা আমার কাছে এসেছেন। তাঁর হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। সে আমাকে বলল, তোমার অবশ্যই কোন ভয় নেই। তুমি খুবই ভাল লোক, যদি অধিক করে ছালাত আদায় করতে! তাঁরা আমাকে নিয়ে চলল, অবশেষে তাঁরা আমাকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় কারালেন, (যা দেখতে) কূপের মত গোল আকৃতির। আর কূপের মত এরও রয়েছে অনেক শিং। আর দু’শিং-এর মাঝখানে একজন ফেরেশতা, যার হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। আর আমি এতে কিছু লোককে (জাহান্নামে) শিকল পরিহিত দেখলাম। তাদের মাথা ছিল নিচের দিকে। কুরাইশের এক ব্যক্তিকে সেখানে আমি চিনে ফেললাম। অতঃপর তারা আমাকে ডান দিকে নিয়ে ফিরল। এ ঘটনা (স্বপ্ন) আমি হাফছাহ (রা.)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। আর হাফছাহ (রা.) তা রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর নিকট বর্ণনা করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, আব্দুল্লাহ তো নেককার লোক। নাফে’ (রহ.) বলেন, এরপর থেকে তিনি সর্বদা অধিক করে (নফল) ছালাত আদায় করতেন। [বুখারী-হা/৭০২৮-৭০২৯, মুসলিম, হা/২৪৭৯] 






ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফিদাকা আবি ওয়া উম্মী ওয়া আহলি ওয়া দাময়ী ��

You may like these posts

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...