Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Test link

Search Suggest

Posts

ঝগড়া-বিবাদ ও তর্ক-বিতর্কঃ (পর্ব ২)

11 min read


★ ইমাম শাফেয়ী রহ. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, কল্যাণ কামনা করা ছাড়া কখনোই কারো সাথে বিতর্ক করিনি। আর কারো সাথে এ জন্য বিতর্ক করিনি যে সে ভুল করুক।[8]

আল্লাহ বলেন,

﴿وَفَوۡقَ كُلِّ ذِي عِلۡمٍ عَلِيمٞ﴾[يوسف:76]

অর্থ, এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর রয়েছে একজন জ্ঞানী। [সূরা ইউসুফ: ৭৬]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦﴾ [الإسراء: ٣٦]

অর্থ, আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। [সুরা ইসরা: ৩৬]

★ আবু মুহাম্মদ ইবনে হাযাম বলেন, একবার আমি আমার এক সাথীর সাথে মুনাযারা করি। তার মুখের মধ্যে তোতলামি থাকাতে আমি তার উপর বিজয় লাভ করি। আমাকে মজলিশে বিজয়ী ঘোষণা করে মজলিশ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আমি যখন মজলিশ শেষ করে ঘরে ফিরি, তখন আমার অন্তরে সন্দেহ হলে আমি কিতাবের শরণাপন্ন হই এবং কিতাবে একটি বিশুদ্ধ প্রমাণ দেখতে পাই যা আমার প্রতিপক্ষের কথাকে বিশুদ্ধ আর আমার কথাকে বাতিল বলে প্রমাণ করে। আমার সাথে একজন সাথী ছিল যে আমাদের তর্কের মজলিসে উপস্থিত ছিল। আমি তাকে কিতাবের বিষয়টি অবহিত করলে সে বলে তুমি এখন কি করতে চাও? আমি বললাম কিতাবটি নিয়ে তার কাছে গিয়ে পেশ করবো এবং তাকে বলব তুমি সঠিক আর আমি ভুল। আর তার কথা কবুল করে নেব। সে বলল, তুমি তোমাকে হেয় করবে? আমি বললাম হা! আমি যদি এ মুহূর্তে তা করতে পারতাম তাহলে আগামীর জন্য অপেক্ষা করতাম না। তবে আমি এখনই আমার মতকে প্রত্যাখ্যান করে তার মতের দিকে ফিরে আসলাম।

★ ইবনে আব্বাস রা. এর কোন এক ছাত্র বলছিল, আমি যদি ইবনে আব্বাসের সাথে বন্ধুত্ব করতাম, তাহলে তার থেকে আরো অনেক ইলম শিখতে পারতাম।[9]

★ ইবনে জুরাইয রহ. বলেন, আমি যত কিছু আতা থেকে শিখেছি তা তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দ্বারাই শিখছি।[10]




বিতর্কের প্রকারভেদ

বিতর্ক দুই প্রকার:

এক- প্রশংসনীয় বিতর্ক।

দুই- নিন্দনীয় বা মন্দ বিতর্ক।


আল্লাহ বলেন,

﴿ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ﴾ [النحل:125]

অর্থ, তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াত প্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন। [সূরা নাহাল: ১২৫]


আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تُجَٰدِلُوٓاْ أَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنۡهُمۡۖ وَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱلَّذِيٓ أُنزِلَ إِلَيۡنَا وَأُنزِلَ إِلَيۡكُمۡ وَإِلَٰهُنَا وَإِلَٰهُكُمۡ وَٰحِدٞ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ﴾ [العنكبوت:46]

অর্থ, আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা জুলুম করেছে। আর তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তাঁরই সমীপে আত্মসমর্পণকারী’। [সূরা আনকাবুত: ৪৬]

নিন্দনীয় বা মন্দ ও প্রশংসনীয় বিতর্কঃ

আল্লামা যাহবী রহ. বলেন, বিতর্ক যদি সত্য উদঘাটন ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাহলে তা হবে প্রশংসনীয়। আর যদি তা সত্যকে প্রতিহত করা অথবা না জেনে করা হয়, তা হবে নিন্দনীয়।[11]

আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, যে ব্যক্তি নাস্তিক মুরতাদ ও বেদাতিদের সাথে এমন বিতর্ক না করে, যে বিতর্ক তাদের মূলোৎপাটন ও জড় কেটে দেয়, তাহলে সে ইসলামের হক আদায় করেনি এবং সে ঈমান ও ইলমের চাহিদা পূরণ করেনি। তার কথা দ্বারা তার অন্তরের তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ করেনি। আর তার কথা তার ঈমান ও ইলমের কোন উপকারে আসেনি।[12]


[8] দেখুন: তারিখে দেমশক ৩৮৪/৫১
[9] দেখুন তারিখে দামেশক [২৯৭/২৯]
[10] দেখুণ: মিফতাহুস সাআদাত [১৬৯/১]
[11] আল কাবায়ের।
[12] মাজমুয়ুল ফাতওয়াহ ১৬৪/২০


আল-কুরআনে এ ব্যাপারেঃ

যখন নূহ আ. এর কওমের লোকেরা নূহ আ. কে বলল,

﴿قَالُواْ يَٰنُوحُ قَدۡ جَٰدَلۡتَنَا فَأَكۡثَرۡتَ جِدَٰلَنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ﴾[هود:32]

অর্থ, তারা বলল, ‘হে নূহ, তুমি আমাদের সাথে বাদানুবাদ করছ এবং আমাদের সাথে অতিমাত্রায় বিবাদ করেছ। অতএব যার প্রতিশ্রুতি তুমি আমাদেরকে দিচ্ছ, তা আমাদের কাছে নিয়ে আস, যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও’। [সূরা হূদ: ৩২]

তিনি তাদের কথার জবাব দেন এবং বলেন,

﴿قَالَ إِنَّمَا يَأۡتِيكُم بِهِ ٱللَّهُ إِن شَآءَ وَمَآ أَنتُم بِمُعۡجِزِينَ ٣٣ وَلَا يَنفَعُكُمۡ نُصۡحِيٓ إِنۡ أَرَدتُّ أَنۡ أَنصَحَ لَكُمۡ إِن كَانَ ٱللَّهُ يُرِيدُ أَن يُغۡوِيَكُمۡۚ هُوَ رَبُّكُمۡ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ﴾ [هود:33-34]

অর্থ, সে বলল, ‘আল্লাহই তো তোমাদের কাছে তা হাজির করবেন, যদি তিনি চান। আর তোমরা তাকে অক্ষম করতে পারবে না’। ‘আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের কোন উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদের বিভ্রান্ত করতে চান। তিনি তোমাদের রব এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে’। [সূরা হুদ আয়াত: ৩৩-৩৪]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قَدۡ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوۡلَ ٱلَّتِي تُجَٰدِلُكَ فِي زَوۡجِهَا وَتَشۡتَكِيٓ إِلَى ٱللَّهِ وَٱللَّهُ يَسۡمَعُ تَحَاوُرَكُمَآۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ ﴾ [المجادلة:01]

আল্লাহ অবশ্যই সে রমনীর কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছিল আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিল। আল্লাহ তেমাদের কথোপকথন শোনেন। নিশ্চয় সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। [সূরা মুজাদালাহ: ০১]

মন্দ বা খারাপ বিতর্ক:

এমন বিতর্ক যা পরিষ্কার বাতিল অথবা বাতিলের দিকে নিয়ে যায়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا نُرۡسِلُ ٱلۡمُرۡسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَۚ وَيُجَٰدِلُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِٱلۡبَٰطِلِ لِيُدۡحِضُواْ بِهِ ٱلۡحَقَّۖ وَٱتَّخَذُوٓاْ ءَايَٰتِي وَمَآ أُنذِرُواْ هُزُوٗا ﴾[الكهف:56]

অর্থ, আর আমি তো রাসূলদেরকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপেই পাঠিয়েছি এবং যারা কুফরী করেছে তারা বাতিল দ্বারা তর্ক করে, যাতে তার মাধ্যমে সত্যকে মিটিয়ে দিতে পারে। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে এবং যা দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, তাকে উপহাস হিসেবে গ্রহণ করে [সূরা কাহাফ: ৫৬]

 অর্থাৎ, যাতে তারা হককে প্রতিহত করতে পারে এবং মিথ্যা সাব্যস্ত করতে পারে। আর নিন্দনীয় বিতর্ক হল, কাফেরদের স্বভাব। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

﴿وَمَا نُرۡسِلُ ٱلۡمُرۡسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَۚ وَيُجَٰدِلُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِٱلۡبَٰطِلِ لِيُدۡحِضُواْ بِهِ ٱلۡحَقَّۖ وَٱتَّخَذُوٓاْ ءَايَٰتِي وَمَآ أُنذِرُواْ هُزُوٗا ﴾[الكهف:56]

অর্থ, আর আমি তো রাসূলদেরকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপেই পাঠিয়েছি এবং যারা কুফরী করেছে তারা বাতিল দ্বারা তর্ক করে, যাতে তার মাধ্যমে সত্যকে মিটিয়ে দিতে পারে। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে এবং যা দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, তাকে উপহাস হিসেবে গ্রহণ করে [সূরা কাহাফ: ৫৬]

এ মহান আয়াত দ্বারা এ কথা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, কাফেররা সর্বদা হককে প্রতিহত ও দূরীভূত করতে ঈমানাদরদের সাথে বিতর্ক করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿كَذَّبَتۡ قَبۡلَهُمۡ قَوۡمُ نُوحٖ وَٱلۡأَحۡزَابُ مِنۢ بَعۡدِهِمۡۖ وَهَمَّتۡ كُلُّ أُمَّةِۢ بِرَسُولِهِمۡ لِيَأۡخُذُوهُۖ وَجَٰدَلُواْ بِٱلۡبَٰطِلِ لِيُدۡحِضُواْ بِهِ ٱلۡحَقَّ فَأَخَذۡتُهُمۡۖ فَكَيۡفَ كَانَ عِقَابِ﴾[غافر:05]

অর্থ, এদের পূর্বে নূহের কওম এবং তাদের পরে অনেক দলও অস্বীকার করেছিল। প্রত্যেক উম্মতই স্ব স্ব রাসূলকে পাকড়াও করার সংকল্প করেছিল এবং সত্যকে বিদূরিত করার উদ্দেশ্যে তারা অসার বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম। সুতরাং কেমন ছিল আমার আযাব! [সূরা গাফের: ০৫]

অর্থাৎ তারা ঝগড়া বিবাদ ও বিতর্ক করে যাতে হককে মিটিয়ে দেয়। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ يُحَآجُّونَ فِي ٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ مَا ٱسۡتُجِيبَ لَهُۥ حُجَّتُهُمۡ دَاحِضَةٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَعَلَيۡهِمۡ غَضَبٞ وَلَهُمۡ عَذَابٞ شَدِيدٌ ﴾[الشورى:16]

আর আল্লাহর আহবানে সাড়া দেয়ার পর আল্লাহ সম্পর্কে যারা বিতর্ক করে, তাদের দলীল-প্রমাণ তাদের রবের নিকট অসার। তাদের উপর (আল্লাহর) গযব এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। [সূরা সুরা: ১৬]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَا يُجَٰدِلُ فِيٓ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ فَلَا يَغۡرُرۡكَ تَقَلُّبُهُمۡ فِي ٱلۡبِلَٰدِ﴾[غافر:04]

অর্থ, কাফিররাই কেবল আল্লাহর আয়াতসমূহ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়। সুতরাং দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে। [সূরা গাফের: ০৪]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنۡهُم مَّن يَسۡتَمِعُ إِلَيۡكَۖ وَجَعَلۡنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ أَكِنَّةً أَن يَفۡقَهُوهُ وَفِيٓ ءَاذَانِهِمۡ وَقۡرٗاۚ وَإِن يَرَوۡاْ كُلَّ ءَايَةٖ لَّا يُؤۡمِنُواْ بِهَاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوكَ يُجَٰدِلُونَكَ يَقُولُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّآ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ ﴾[الأنعام:25]

আর তাদের কেউ তোমার প্রতি কান পেতে শোনে, কিন্তু আমি তাদের অন্তরের উপর রেখে দিয়েছি আবরণ যেন তারা অনুধাবন না করে, আর তাদের কানে রেখেছি ছিপি। আর যদি তারা প্রতিটি আয়াতও দেখে, তারা তার প্রতি ঈমান আনবে না; এমনকি যখন তারা তোমার কাছে এসে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়, যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘এটা পূর্ববর্তীদের কল্পকাহিনী ছাড়া কিছুই নয়।’ [সূরা আনআম: ২৫]

অর্থাৎ, তুমি পূর্বেকার লোকদের থেকে গ্রহণ করছ এবং তাদের কিতাবসমূহ ও তাদের মুখ থেকে শুনে শুনে শিখছ। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَقَالُوٓاْ ءَأَٰلِهَتُنَا خَيۡرٌ أَمۡ هُوَۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلَۢاۚ بَلۡ هُمۡ قَوۡمٌ خَصِمُونَ﴾[الزخرف:57]

অর্থ, আর তারা বলে, আমাদের উপাস্যরা শ্রেষ্ঠ নাকি ঈসা? তারা কেবল কুটতর্কের খাতিরেই তাকে তোমার সামনে পেশ করে। বরং এরাই এক ঝগড়াটে সম্প্রদায়। [সুরা যুখরফ: ৫৭]

বাতিলের উপর তারা ঝগড়া করে এবং তারা ছিল অধিক ঝগড়াটে।

«عن ابن عباس قال: جاء عبد الله بن الزبعرى إلى النبي فقال: تزعم أن الله أنزل عليك هذه الآية ﴿إِنَّكُمۡ وَمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمۡ لَهَا وَٰرِدُونَ ٩٨ لَوۡ كَانَ هَٰٓؤُلَآءِ ءَالِهَةٗ مَّا وَرَدُوهَاۖ وَكُلّٞ فِيهَا خَٰلِدُونَ﴾  ]الأنبياء: ٩٨ [فقال ابن الزبعرى: قد عبدت الشمس والقمر والملائكة وعزير وعيسى بن مريم، كل هؤلاء في النار مع آلهتنا؟ فنزلت –﴿وَلَمَّا ضُرِبَ ٱبۡنُ مَرۡيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوۡمُكَ مِنۡهُ يَصِدُّونَ ٥٧ وَقَالُوٓاْ ءَأَٰلِهَتُنَا خَيۡرٌ أَمۡ هُوَۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلَۢاۚ بَلۡ هُمۡ قَوۡمٌ خَصِمُونَ ٥٨﴾ [الزخرف: ٥٧] ثم نزلت ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ﴾ [الأنبياء: ١٠١]»

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে যুবারি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করে তুমি কি ধারণা কর যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমার উপর এ আয়াত-

 ﴿إِنَّكُمۡ وَمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمۡ لَهَا وَٰرِدُونَ ٩٨ لَوۡ كَانَ هَٰٓؤُلَآءِ ءَالِهَةٗ مَّا وَرَدُوهَاۖ وَكُلّٞ فِيهَا خَٰلِدُونَ ﴾[الأنبياء: ٩٨ [

র্অথ, নিশ্চয় তোমরা এবং আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের পূজা কর, সেগুলো তো জাহান্নামের জ্বালানী। তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে। [সুরা আম্বিয়া: ৯৮]

নাযিল করেন, ইবনে যুবারি বলেন, আমরা সূর্য্, চন্দ্র, ফেরেস্তা উযাইর ও ঈসা ইবনে মারয়ামের ইবাদত করি। তাহলে তাদের সবাই কি আমাদের ইলাহগুলোর সাথে জাহান্নামে যাবে? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন-

﴿وَلَمَّا ضُرِبَ ٱبۡنُ مَرۡيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوۡمُكَ مِنۡهُ يَصِدُّونَ ٥٧ وَقَالُوٓاْ ءَأَٰلِهَتُنَا خَيۡرٌ أَمۡ هُوَۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلَۢاۚ بَلۡ هُمۡ قَوۡمٌ خَصِمُونَ ٥٨﴾ [الزخرف: ٥٧]

অর্থ, আর তারা বলে, আমাদের উপাস্যরা শ্রেষ্ঠ নাকি ঈসা? তারা কেবল কুটতর্কের খাতিরেই তাকে তোমার সামনে পেশ করে। বরং এরাই এক ঝগড়াটে সম্প্রদায়। [সূরা যুখরুফ: ৫৭]

তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰٓ أُوْلَٰٓئِكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ ﴾[ الأنبياء: ١٠١]

র্অথ, নিশ্চয় আমার পক্ষ থেকে যাদের জন্য পূর্বেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা থেকে দূরে রাখা হবে। [সূরা আম্বিয়া: ১০১]

আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করেন এবং মুসলিমদের সম্বোধন করে বলেন,

﴿وَلَا تَأۡكُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسۡقٞۗ وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوۡلِيَآئِهِمۡ لِيُجَٰدِلُوكُمۡۖ وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ﴾[الأنعام:121]

আর তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা সীমালঙ্ঘন এবং শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্ররোচনা দেয়, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তবে নিশ্চয় তোমরা মুশরিক। [সূরা আনআম, আয়াত: ১২১]

তাদের এ বিতর্ক সম্পর্কে আরো দেখুন হাদিসের মাধ্যমে।

عن عبد الله بن عباس قال: «أتى أناس النبي صلى الله عليه وسلم فقالوا: يا رسول الله، أنأكل ما نقتل، ولا نأكل ما يقتل الله؟

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, কিছু লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরাবারে এসে জিজ্ঞাসা করে বলে হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যা হত্যা করি তা আমরা খাব আল্লাহ তা‘আলা যা হত্যা করে আমরা তা খাব না? তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত
﴿ فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ إِن كُنتُم بِ‍َٔايَٰتِهِۦ مُؤۡمِنِينَ
থেকে নিয়ে
وَإِنۡ أَطَعۡتُمُوهُمۡ إِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُونَ﴾
পর্যন্ত নাযিল করেন।[13]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজে গিয়ে যা দেখেন, তা নিয়ে মুশরিকরা বিতর্ক করলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিতর্কের বর্ণনা দিয়ে বলেন,

﴿مَا كَذَبَ ٱلۡفُؤَادُ مَا رَأَىٰٓ ١١ أَفَتُمَٰرُونَهُۥ عَلَىٰ مَا يَرَىٰ﴾ [النجم : 11-12]

অর্থ, সে যা দেখেছে, অন্তঃকরণ সে সম্পর্কে মিথ্যা বলেনি। সে যা দেখেছে, সে সম্পর্কে তোমরা কি তার সাথে বিতর্ক করবে? [সূরা নাজম ১১-১২]

অর্থাৎ, হে মুশরিকগণ আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব নিদর্শন দেখিয়েছেন তা তোমরা অস্বীকার করছ! এবং সন্দেহ পোষণ করছ! আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِن جَٰدَلُوكَ فَقُلِ ٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِمَا تَعۡمَلُونَ ٦٨ ٱللَّهُ يَحۡكُمُ بَيۡنَكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ فِيمَا كُنتُمۡ فِيهِ تَخۡتَلِفُونَ﴾ [النجم:68-69]

অর্থ, আর তারা যদি তোমার সাথে বাকবিতণ্ডা করে, তাহলে বল, ‘তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’ তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ, আল্লাহ সে বিষয়ে কিয়ামতের দিন ফয়সালা করে দেবেন। [সূরা আল-হজ: ৬৮-৬৯]

মুশরিকরা কুরআন বিষয়ে অনর্থক বিতর্ক করে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَا يُجَٰدِلُ فِيٓ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ فَلَا يَغۡرُرۡكَ تَقَلُّبُهُمۡ فِي ٱلۡبِلَٰدِ ﴾[غافر:04]

কাফিররাই কেবল আল্লাহর আয়াতসমূহ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়। সুতরাং দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ যেন তোমাকে ধোকায় না ফেলে। [গাফের ০৪]

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا تُجَادلِوُا فِي القُرْآنِ؛ فَإنّ جِدَالا فيِهِ كُفْرٌ»

অর্থ, তোমরা কুরআন বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদ করো না। কারণ, কুরআন বিষয়ে বিবাদ করা কুফরি।


দুর্বল-ঈমান সম্পন্ন লোকদের বিতর্ক:

অনুরূপভাবে দুর্বল ঈমানদারদের পক্ষ হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর্কের সম্মূখীন হন।

 আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿كَمَآ أَخۡرَجَكَ رَبُّكَ مِنۢ بَيۡتِكَ بِٱلۡحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقٗا مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ لَكَٰرِهُونَ ٥ يُجَٰدِلُونَكَ فِي ٱلۡحَقِّ بَعۡدَ مَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى ٱلۡمَوۡتِ وَهُمۡ يَنظُرُونَ﴾ [الأنفال:5-6]

অর্থ, (এটা এমন) যেভাবে তোমার রব তোমাকে নিজ ঘর থেকে বের করেছেন যথাযথভাবে এবং নিশ্চয় মুমিনদের একটি দল তা অপছন্দ করছিল। তারা তোমার সাথে সত্য সম্পর্কে বিতর্ক করছে তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর। যেন তাদেরকে মৃত্যুর দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হচ্ছে, আর তারা তা দেখছে। [সূরা আনফাল: ৫-৬]




﴿قَالَ قَدۡ وَقَعَ عَلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ رِجۡسٞ وَغَضَبٌۖ أَتُجَٰدِلُونَنِي فِيٓ أَسۡمَآءٖ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٖۚ فَٱنتَظِرُوٓاْ إِنِّي مَعَكُم مِّنَ ٱلۡمُنتَظِرِينَ﴾[الأعراف:71]

সে বলল, নিশ্চয় তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আযাব এ ক্রোধ পতিত হয়েছে। তোমরা কি এমন নাম সমূহ সম্পর্কে আমাদের সাথে বিবাদ করছ, যার নাম করণ করছ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ নাযিল করেননি? সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি [সূরা আরাফ: ৭১]


আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ٱلَّذِينَ يُجَٰدِلُونَ فِيٓ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ سُلۡطَٰنٍ أَتَىٰهُمۡۖ كَبُرَ مَقۡتًا عِندَ ٱللَّهِ وَعِندَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْۚ كَذَٰلِكَ يَطۡبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ قَلۡبِ مُتَكَبِّرٖ جَبَّارٖ ﴾[غافر:35]

অর্থ, যারা নিজদের কাছে আগত কোন দলীল-প্রমাণ ছাড়া আল্লাহর নিদর্শনা-বলী সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়। তাদের এ কাজ আল্লাহ ও মুমিনদের দৃষ্টিতে অতিশয় ঘৃণার্হ। এভাবেই আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী স্বৈরাচারীর অন্তরে সীল মেরে দেন। [সূরা গাফের: ৩৫]



আল্লাহ তায়ালা বলেন,

﴿ّإِنَ ٱلَّذِينَ يُجَٰدِلُونَ فِيٓ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ سُلۡطَٰنٍ أَتَىٰهُمۡ إِن فِي صُدُورِهِمۡ إِلَّا كِبۡرٞ مَّا هُم بِبَٰلِغِيهِۚ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [غافر:56]

অর্থ, নিশ্চয় যারা তাদের নিকট আসা কোন দলীলÑ প্রমাণ ছাড়াই আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে বিতর্ক করে, তাদের অন্তরসমূহে আছে কেবল অহংকার, তারা কিছুতেই সেখানে (সাফল্যের মনজিলে) পৌঁছবে না। কাজেই তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। [গাফের: ৫৬]


আল্লাহ তায়ালা বলেন,

﴿أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ يُجَٰدِلُونَ فِيٓ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ أَنَّىٰ يُصۡرَفُونَ ﴾[غافر:69]

অর্থ, তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে বাকবিতণ্ডা করে? তাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? [সূরা গাফের: ৬৯]






ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফিদাকা আবি ওয়া উম্মী ওয়া আহলি ওয়া দাময়ী ��

You may like these posts

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...